অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করতে হবে

| শনিবার , ২৬ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা বা অতিদারিদ্র্য পরিমাপের সংজ্ঞা হালনাগাদ করেছে। সংস্থাটির মতে, এখন থেকে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কারও প্রতিদিন গড়ে ৩ ডলারের পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে, তাঁকে অতিদরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হবে। অর্থাৎ তিনি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে মৌলিক চাহিদা পূরণে কারও ২ দশমিক ১৫ ডলারের পণ্য কেনার সামর্থ্য না থাকলে তাঁকে অতিদরিদ্র বলে বিবেচনা করে আসছিল বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক অতি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা নতুন সংজ্ঞা বা হিসাব পদ্ধতি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নিম্ন মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের জন্য যে আলাদা হিসাব পদ্ধতি আছে, সেটিও হালনাগাদ করা হয়েছে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রে পিপিপি ভিত্তিতে মৌলিক চাহিদা পূরণে ৩ দশমিক ৬৫ ডলার ব্যয়ের সামর্থ্য না থাকলে এতদিন অতিদরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হতো। এ সীমা বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রে এ সীমা ৬ দশমিক ৮৫ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা বা অতিদারিদ্র্য পরিমাপের নতুন সংজ্ঞা বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশে ২০২২ সালে পিপিপি ভিত্তিতে অতিদরিদ্র মানুষ ছিল ৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আগের সংজ্ঞা অনুসারে ২০২২ সালে যা ছিল ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ২০ ডলারের হিসাব বিবেচনা নিলে ২০২২ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের সংজ্ঞা অনুসারে একই বছর যা ছিল ৩০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, নতুন সংজ্ঞা বা হিসাব পদ্ধতি অনুসারে বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনে একজন অতিদরিদ্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় ৮১ কোটি মানুষ এখনও অতিদারিদ্র্যে বসবাস করছে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড প্রোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই)-এর পরিচালক সাবিনা আলকির বলেন, দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে যুদ্ধ, সংঘাত। তিনি আরও বলেন, ‘এই যে চিত্র উঠে এসেছে, তা সহজেই বোধগম্য। তবে আমাদের কাছে সবচেয়ে বেদানাদায়ক যে চিত্রটা উঠে এসেছে, সেটা হলো একটি শালীন বা ভদ্রোচিত জীবনযাপন এবং নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা খুঁজছে এমন মানুষের সংখ্যা ৪৫ কোটি।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে একটি অনিবার্য চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে এই চিত্র। কোন দেশে কী পরিমাণ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারও একটি চিত্র উঠে এসেছে এই গবেষণায়। এতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি চরম দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ২৩ কোটি মানুষই চরম দরিদ্র। এরপরই যেসব দেশের নাম উঠে এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো। ভারত ও এই চার দেশ মিলিয়েই চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি বাড়ছে না। এতে প্রকৃত আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। ৩ বছর ৩ মাস বা ৩৯ মাস ধরে বাংলাদেশে মজুরির হার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। তাছাড়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্যের শ্লথগতি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন পত্রিকান্তরে বলেন, এ দেশে এমন অনেক পরিবার বা মানুষ আছেন, যাঁরা বছরে যদি দুই দিনও কাজ না পান, তাহলে তাঁরা দরিদ্র হয়ে পড়েন। তাঁরা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যান। বিষয়টি অনেকটা এমন যে এ দেশে ‘টোকা’ দিলেই অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যান। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে, সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার মতো কোটি কোটি পরিবার নেই। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবার যেকোনো সময় দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এই অর্থনীতিবিদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত মজুরি ক্রমাগত কমছে। প্রায় সব উন্নয়নসহযোগীর পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর ৪ শতাংশের মতো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে। প্রবৃদ্ধিতে মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে। তাই অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে