অভ্যুত্থানের ৩ বছরে প্রথমবার বেকায়দায় মিয়ানমারের জান্তা প্রধান

| বৃহস্পতিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

মধ্য জানুয়ারি, মিয়ানমারের একটি ক্যান্টনমেন্ট শহরে ছোট একটি জটলার সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন কট্টর জান্তাপন্থি ভিক্ষু পাউক কোতাও। তিনি বলেন, দেশটির জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং পদত্যাগ করবেন এবং তার উপপ্রধান দেশের শাসনভার গ্রহণ করবেন। তার এই কথায় উপস্থিত জনতা সম্মতি জানিয়ে হাততালি দিয়ে ওঠে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিয়ানমারের এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। দেশটিতে সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান তৃতীয় বছরে পড়েতে চলেছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির দলকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে মিন অং হ্লাইং নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী।

যে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটিতে গণবিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল এবং জান্তা বাহিনীর দমনপীড়নে বহু বিক্ষোভকারী নিহত হয়। সু চির দলের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক চাপও ছিল। কিন্তু সব চাপ উপেক্ষা করে দেশ শাসন করে যাচ্ছেন জান্তা প্রধান হ্লাইং। কিন্তু গত কয়েক মাসে জান্তা শাসন বিরোধী মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে দেশটির বেশ কয়েকটি এলাকার দখল নিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

জোট গঠন করে বিদ্রোহীদের করা এই সমন্বিত আক্রমণ কিছুতেই প্রতিহত করতে পারছে না মিয়ামনারের সামরিক বাহিনী। বরং একটু একটু করে এলাকা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। গত বছর অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী জোট এই আক্রমণ শুরু করেছে। তারা এর নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭’।

এ পরিস্থিতিতে জান্তা শাসনপন্থিরাই হ্লাইংয়ের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনলাইনে, জান্তাপন্থি সাংবাদিক এবং ব্লগাররাও উপরের ভিক্ষুর মতো একই কথা বলছেন। এমনই একজন জান্তাপন্থি ইউটিউবার কো মাআং মাআং বলেন, তার সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা উচিত। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেই জান্তা বাহিনীর নেতা এবং সেনাবাহিনীর প্রধান হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে এ ধরণের কথা বলার সাহস কেউ দেখাত না।

মিয়ানমার পিচ মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, জান্তা বাহিনী গত অক্টোবরের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। যদিও বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির ফলে চীন সীমান্তের কাছে লড়াই থেমেছে। তবে দেশের অন্যান্য অংশে সংঘর্ষ চলছে। জান্তা বাহিনী তাদের হারের বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তবে এর আগ তারা স্বীকার করেছে, তারা দেশটির কয়েকটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সেখানে সামরিক বাহিনী গভীর হতাশার মধ্যে রয়েছে। যে হতাশা ব্যক্তিগতভাবে মিন অং হ্লাইংয়ের ভেতরও ছড়িয়েছে। কেউ কেউ তাই নিশ্চয়ই তার সরে যাওয়া দেখলে খুশি হবে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে নতুন করে সেনা নিয়োগেও বেগ পেতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় অর্ধেকের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে রান্নাঘরে গৃহবধূর লাশ : স্বামী রাসেল বড়ুয়া র‌্যাবের জালে