আজ থেকে ২৫ বছর আগের কথা। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। ঢাকায় প্রথম টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। প্রতিপক্ষ পরাক্রমশালী ভারত। বাংলাদেশের যাত্রা কেবল শুরু। সেদিন যে ১৫ জন ক্রিকেটারের হাত ধরে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করেছিল সেই ক্রিকেটারদের সংবর্ধিত করল বিসিবি। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর পুর্তিতে নানা অনুষ্টানমালার আয়োজন করছে বিসিবি। যার শেষটি ছিল গতকাল। যাতে সংবর্ধিত করা হয় প্রথম টেস্টের ১৫ ক্রিকেটারকে। সবার শরীরে জড়ানো কালো ব্লেজার। বুক পকেটের ওপর উৎকীর্ণ ২৫ বছর উদযাপনের লোগো। একে একে নাম ঘোষণা হচ্ছে আর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গর্বিত এই ক্রিকেটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সম্মাননা ক্রেস্ট এবং ফুলের তোড়া। এরপর অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটারদের নিয়ে কাটা হলো ২৫ পাউন্ড ওজনের বিশাল এক কেক। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কেক খাইয়ে দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। এভাবেই বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর উদযাপন হলো মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের নর্থ প্লাজায়।
২০০০ সালের ২৬ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত আইসিসির বোর্ড সভায় ১০ নম্বর দেশ হিসেবে টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ। এরপর ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট খেলতে নামে টাইগাররা। ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির দিন হিসেবে একে একে কেটে গেছে ২৫টি বছর। আজ সেই ঐতিহাসিক মাইলফলকের দিনের রজতজয়ন্তী। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই দিনটাকে বিশেষভাবে পালন করার চেষ্টা করেছে। আরও বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ‘বাংলাদেশ, সেলিব্রেটিং ২৫ ইয়ার ইন টেস্ট ক্রিকেট’ শিরোনামে বিভাগীয় শহরগুলোতে নানা আয়োজনে রজতজয়ন্তী উদযাপন করে আসছিলো। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মাইলফলকের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় আয়োজন রাখা হয় হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিবি সভাপতি এবং বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অন্যতম সদস্য, প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি তার বক্তব্যে বলেণ বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেকদুর এগিয়ে গেছে। আমরা হয়তো প্রথম টেস্ট ম্যাচটা খেলেছিলাম। কিন্তু এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেকদুরে চলে গেছে। এই ক্রিকেটকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। আর সে জণ্য আমরা সবাই চেষ্টা করব নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করার। ক্রিকেটকে আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা সহসাই আইসিসির বড় ইভেন্ট জিততে চাই। আর সেটা করতে হলে সবাইতে একযোগে কাজ করতে হবে। আর আমরা সে জণ্য প্রস্তুত আছি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এরপর আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের বাকি আনুষ্ঠানিকতা। এই সংবর্ধনায় থাকতে পারেননি প্রথম টেস্টের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। দেশে পট পরিবর্তনের পর থেকে পলাতক দুর্জয়। এছাড়া ছিলেননা আরো তিনজন। তারা হলেন আকরাম খান। যিনি তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে রয়েছে। আল শাহরিয়ার রোকন দীর্ঘদিন ধরে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী। এছাড়া খালেদ মাসুদ পাইলটও রয়েছেন দেশের বাইরে। এছাড়া বাকিরা সবাই ছিলেন আনন্দঘন এই অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া অভিষেক টেস্টের ২ ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মেহরাব হোসেন অপি, ওয়ান ডাউন হাবিবুল বাশার, সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, দুই পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত ও বিকাশ রঞ্জন দে (ধর্মান্তরিত হয়ে মাহমুদুল হাসান রানা), বাঁ–হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা থার্ড ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম, দ্বাদশ ব্যক্তি রাজিন সালেহ আলম, বাঁ–হাতি স্পিনার এনামুল হক মনি, অফস্পিনার ফাহিম মুন্তাসির সুমিত এবং হেড কোচ সারোয়ার ইমরান ও ম্যানেজার আজিজ আল কায়সার টিটোকে ব্লেজার পরিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ ছাড়াও বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম, নাজমুল আবেদিন ফাহিম, ইফতিখার রহমান মিঠু, ফাহিম সিনহা, মঞ্জুরুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় দলের ২ সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান এবং গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও এসেছিলেন। ছিলেন নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জোতি।