আট বছর আগে মামলা, অভিযোগ গঠনেরও প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল; তবুও সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। এর মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর তারিখ পিছিয়েছে ২৫ বারের মত। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মামলাটিতে আগামী ৫ মে আবার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রয়েছে। তবে মামলাটির কার্যক্রমের ওপর দুই আসামী হাই কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাখায় এটির বিচার শুরুর প্রক্রিয়ার জট এখনও খোলেনি। এতে হত্যা মামলাটির বিচার থেমে আছে। খবর বিডিনিউজের।
মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তারাও সুস্পষ্ট করে বলতে পারছেন না, কবে নাগাদ ৩৯ জন আসামির মধ্যে মাত্র দুই জনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন যদিও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্ট খোলার প্রথম দিনই আমি মেনশন করব। আমার দরকার দুই আসামির পক্ষে রিভিশন মামলার নম্বর।’ এর মধ্যে রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানা জামিনের চেষ্টা করছেন। গত বছর নভেম্বরে নিম্ন আদালত থেকে জামিন না পাওয়ায় তিনি হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২১ মার্চ তাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে। চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রকে জবাব দিতে বলেছে।
মামলার গেরো না খোলার এমন পরিস্থিতিতে শনিবার বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে। বিচারের এমন দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে সোচ্চার কর্মীরা। তারা এ মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর না করারও সমালোচনা করেন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই শিল্প দুর্ঘটনার দিনটি ছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল । সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরও হাজারখানেক গার্মেন্ট শ্রমিককে। ঘটনার দিনই সাভার থানায় দুটি মামলা হয়। পরের বছর দুর্নীতি দমন কমিশন দায়ের করে আরেকটি মামলা। প্রথমটিতে হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে ভবন ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সাভার মডেল থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। রাজউক কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের দায়ের করা অন্য মামলাটিতে ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়।
বর্তমানে হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি মো. মিজানুর রহমান গতকাল শুক্রবার জানান, অভিযোগ গঠনের পর আটজন আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিতের আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ছয়জনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। দুই আসামি সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাত উল্লাহ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলীর পক্ষের আবেদন এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি বলেন, ‘তাদের আবেদনের ফলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আবেদন নিষ্পত্তির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে চারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তাই মামলার বিচার প্রক্রিয়ার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।’