অভিযানেও থামছে না অবৈধভাবে বালি উত্তোলন

বাঁশখালীতে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বনভূমি ও রাস্তাঘাট

বাঁশখালী প্রতিনিধি | সোমবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীতে অবৈধভাবে পাহাড়ি বালি উত্তোলন ও জলকদর খালের বিভিন্নস্থান থেকে মাটি কেটে চড়া দামে বিক্রি চলছে নির্বিচারে। উপজেলা প্রশাসন এ অবৈধ বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে বেশ কয়বার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও স্কেভেটর জব্দ করলে ও তা কিছুতেই দমাতে পারছে না। বিনা পুঁজিতে ভাল ব্যবসা নামে পরিচিত অবৈধ বালি উত্তোলন ও মাটি কেটে বিক্রিতে বাঁশখালীর কিশোর থেকে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছে কয়েকটি সিন্ডিকেট।
বাঁশখালীর পুকুরিয়া ও খানখানাবাদ এলাকায় শঙ্খ নদী থেকে বালি উত্তোলন করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার ও নতুন বাড়ি ঘর তৈরিতে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে সাধনপুর এলাকায় পাহাড়ি মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলে কয়েক দিন নীরব থাকে, এর পর আবারো চালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চক্র। কালীপুরে পাহাড় কাটা নিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও পাহাড়ি এলাকার মাটি কাটা নিয়ে বনবিভাগ সম্প্রতি কয়েকটি মামলা করেছে কালীপুর সাধনপুর রেঞ্জের আওতায়। বাহারছড়া ও কাথরিয়া এলাকায় বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র। সম্প্রতি সেখানে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা হলেও আবারো চক্রটি তৎপর বলে জানা গেছে। গণ্ডামারা, সরল, শীলকূপ, শেখেরখীল, ছনুয়া এলাকায় জলকদর খালের ভরাট হওয়া জায়গা থেকে মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে একটি চক্র। কয়দিন আগে শীলকূপ ও গণ্ডামারা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান করে এস্কেভেটর জব্দ করলেও যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তারা বারবার পার পেয়ে যায়।
জেলা প্রশাসন থেকে জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহালের ইজারা ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এর আগে ২০১৯ সালে স্থানীয় ঠিকাদার মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ২২ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় জঙ্গল পুঁইছড়ি বালুমহাল ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বালিমহালের ইজারা বাতিল করে দেওয়া হয়। অথচ পুঁইছড়ির পাহাড়ি এলাকায় ১০/১৫ পয়েন্ট থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন ও বিক্রি চোখে পড়ার মত। পুঁইছড়ির ১০/১৫ জনের সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় ধরে এ কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সেখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা হয়েছে করুণ।
স্থানীয় চেয়ারম্যান সোলতানুল গনি চৌধুরী এ অবৈধ বালি ব্যবসা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করেছেন বলে জানা গেলেও এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এ অবৈধভাবে উত্তোলিত বালি দিয়ে হয়ে থাকার কারণে কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। পাহাড়ের পাদদেশে বেয়ে আসা ছড়া হতে বালি উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে পাহাড় ধ্বসে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি। তার সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। পাহাড়ের পাশের ছড়াগুলোর বালি কেটে পাচার করায় এগুলো বর্তমানে নদীতে রূপ নিচ্ছে। চট্টগ্রামের অন্যতম চুনতি অভয়ারণ্যের অভ্যন্তরে এ ভাবে বালি উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জান চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হলে সেই যেই কেউ হউক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানের খবর পেলেই বালি কারবারিরা গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়। তাছাড়া অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকারীদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করে বালুখেকোদের দাপট বন্ধ করা হবে।’ তিনি স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারী ও কাপ্তাইয়ে দুই যুবকের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধবৈশাখের শুরুতে বৃষ্টি নেই, গরম লাগছে বেশি