অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বঙ্গভবনের দরবার হলে গতকাল তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকেরা দরবার হলে উপস্থিত ছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ১৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, এএফ হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.), সুপ্রদীপ চাকমা, ফরিদা আখতার, ফারুক–ই আজম বীর প্রতীক, বিধান রঞ্জন রায়, আ. ফ. ম খালিদ হাসান, শারমিন মুরশিদ, নূরজাহান বেগম, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নিয়োগ পাওয়া ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জন শপথ নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিনজন শপথ নিতে পারেননি। তবে তাঁদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হওয়া দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিনন্দন জানাই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। যিনি আমাদের গর্ব। সমগ্র বাঙালি জাতির গর্ব তিনি। আলাদাভাবে বলতে হয় তিনি চট্টগ্রামের অহংকার। তিনি যখন ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান, তখন দৈনিক আজাদী প্রধান শিরোনাম করেছিল এভাবে : ‘আঁরার ইউনূস নোবেল পাইয়্যে’। এই শিরোনাম দেখে ড. ইউনূস নিজেই এতোটাই খুশি হন যে এই শিরোনামের পত্রিকাটি দেখিয়ে ছবি তুলেছিলেন তিনি, আর ছবিটি প্রথম আলোতে বড় করে ছাপা হয়। তিনি শুধু আমাদের অহংকার নন, তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার যে ধারণা প্রবর্তন করেছেন, তা সারা বিশ্বের সামনে এক অনন্য মডেল। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় ড. ইউনূসের বিকল্প হয় না। তাঁর নেতৃত্বকে আমাদের সবাইকে সহায়তা দিতে হবে। আশা করি, দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হবেন। তাঁর নেতৃত্বেই ন্যায়বিচার–ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রা শুরু হবে।
অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠনের পূর্বেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যাঁরা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।’ নতুন এই বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এছাড়া বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রথম কাজ বলে উল্লেখ করেছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত করেন যে দেশে কোনো জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।’ যে সরকার হবে তা মানুষকে রক্ষা করবে, এ কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সম্পদ নষ্ট করছে। নিয়ে যাচ্ছে। অফিস–আদালতে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আহমদিয়া–সবার ওপর আক্রমণ হচ্ছে। এগুলো হলো ষড়যন্ত্রের অংশ, আমাদের বিষয় না। আমাদের কাজ হলো সবাইকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন।’ বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা–এগুলো অগ্রগতির বড় শত্রু বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে যাত্রা শুরু হলো, সেই যাত্রার শত্রু আছে। কাজেই শত্রুকে যাতে রোধ করা যায়, তাদেরকে বুঝিয়ে–শুনিয়ে হোক, আইনশৃঙ্খলার মাধ্যমে হোক। তাকে মেরে–পিটিয়ে করা ঠিক না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন হতে হবে, তাদের হাতে সোপর্দ করলে আমরা নিশ্চিত থাকব, তার একটা বিহিত হবে। এমন হলো আমরা হাতে দিলাম, দুটা টাকা নিয়ে আবার ছেড়ে দিল, এটা যেন আবার না হয়। সেই আস্থা আমাদেরকে আনতে হবে।’
ড. ইউনূসের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা আছে। আবার তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমরা আশা করছি, ড. ইউনূসের এ দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্থির সময়ের অবসান ঘটবে। দেশ একটা সুন্দর পরিবেশের মাধ্যমে সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যাবে। সফল হোক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।