কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর শাখা ঢেমুশিয়া খালের ওপর স্থায়ী একটি সেতুর অভাবে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ১৩টি গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে স্থিত তক্তার সেতুটি (লালব্রিজ) ভেঙে খালে নিপতিত হওয়ায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে এসব গ্রামের মানুষের। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার হাজারো শিক্ষার্থী। উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল খালের ওপর নতুন করে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের দাবি উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় দারুল ইরফান কওমী মাদ্রাসা কর্তৃক হাজারো শিক্ষার্থীর যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রথমে লোহার এঙ্গেলের ওপর তক্তা বিছিয়ে ছোট আকারের সেতু নির্মাণ করলেও প্রায় তিনবছর আগে এটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় গাছের তক্তা দিয়ে ফের সেতুটি মেরামত করলেও বর্তমানে সেই তক্তার সেতুটি ভেঙে পড়েছে খালে। এই পরিস্থিতিতে অসংখ্য স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই। যাতায়াতের একমাত্র এই সেতু ব্যবহারকারী লক্ষাধিক মানুষের পক্ষে দাবি উঠেছে খালের ওপর স্থায়ী একটি পাকা সেতু নির্মাণের। কোনাখালী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের লতাবুনিয়া পাড়ার বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী মো. মনির উদ্দিন সহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ১৯৮০ সালের পর শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে দারুণ ইরফান কওমী মাদ্রাসার অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যা স্থানীয়ভাবে লালব্রিজ হিসেবে পরিচিত। তখন থেকেই দুই ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া, লতাবুনিয়া পাড়া, খাতুর বাপের পাড়া, ডিয়ারপাড়া, সিকদার পাড়া, মুছারপাড়া, জমিদার পাড়া, নোয়াপাড়াসহ দুই ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল না করলেও মোটর সাইকেল, রিঙা দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তক্তার সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে গেলেও কেউই জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছেন না। এখানে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে যাতায়াত বন্ধ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার দৈনিক আজাদীকে জানান, স্থায়ীভাবে খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য কোনাখালী এবং ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে যৌথভাবে প্রস্তাবনা দেওয়া হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা আলোর মুখ দেখেনি। এখন নতুন করে এলজিইডিতেও প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। যাতে এই সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত সময়ে স্থায়ীভাবে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।
কোনাখালীর চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ‘খালে ভেঙে পড়া তক্তার সেতুটি আপাতত চলাচল উপযোগী করা হবে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে। সেই মেরামতের কাজ শুরু করা হবে কয়েকদিনের মধ্যে।’
এ প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘সরেজমিনে এই সেতু পরিদর্শনপূর্বক নতুন করে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দুই ইউনিয়নের সংযোগস্থল ঢেমুশিয়া খালের ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা কেন বাস্তবায়ন হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হবে। দ্রুতসময়ের মধ্যে এখানে স্থায়ী সেতু নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’