লোহাগাড়ার চুনতিতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গভীর গর্তের পানিতে ভাসমান অবস্থায় এক বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের লম্বাশিয়া পাহাড়ি এলাকায় এঘটনা ঘটে। উদ্ধারকৃত বন্যহাতির শুঁড় থেঁথলে গেছে। এছাড়া ডান কানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে সাতগড় ছড়া ও সন্নিহিত টিলা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করেন। অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ও যন্ত্রপাতি জব্দ করেন। পরে বালুগুলো নিলামে বিক্রি করেন। নিলামের বালু বিক্রির কথা বলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করে যাচ্ছে বালু। বন্যহাতির ভাসমান মরদেহ উদ্ধারের গর্তটি কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের যে কোন সময় বন্যহাতির দল পানি পান করতে গর্তের কাছে এসেছিল। এতে একটি হাতি গর্তের পানিতে পড়ে যায়। সকালে স্থানীয় লোকজন কাজ করতে এসে বন্যহাতির ভাসমান মরদেহ দেখতে পান। পরে বিষয়টি বনবিভাগে জানানো হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তের পানিতে ভাসছিল বন্যহাতিটি। গর্তের চারপাশে বন্যহাতির একাধিক পায়ের চাপ দেখা গেছে। গর্তের অদূরে বনাঞ্চলে অবস্থান করছিল ১০-১২টি বন্যহাতির একটি দল। কিছুক্ষণ পর পর বনাঞ্চল থেকে আওয়াজ করছি হাতির দল। ঘটনাস্থলের আশপাশে রয়েছে একাধিক বালুর স্তুপ। ছড়া ও টিলা কেটে অব্যাহত রয়েছে বালু উত্তোলন।
চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। সন্ধ্যায় গর্তের পানি থেকে ভাসমান বন্যহাতির মরদেহ এস্কেভেটর দিয়ে উদ্ধার করা হয়। মৃত বন্যহাতির আনুমানিক বয়স ২ বছর। নারী প্রজাতির মৃত হাতির দৈর্ঘ্য ৬ ফুট, শুঁড় ৩ ফুট, লেজ ৩৩ ইঞ্চি। ময়নাতদন্ত শেষে বন্যহাতির মরদেহ মাটিতে
পুঁতে ফেলা হয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. এম. খালেকুজ্জামান জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্যহাতির মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাতিটি পানির গর্তে পড়ে যাবার পর দলের অন্যরা শুঁড় দিয়ে টেনে তোলার চেষ্টা করেছে। এতে মৃত হাতির শুঁড় থেঁতলে গেছে ও কানের ডানপাশে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। এছাড়া হাতির মরদেহে আর কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হাতির শুঁড় থেঁতলে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর হাতিটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।