রাস্তায় ভাসমান ব্যবসায়ী। ফুটপাতে স্থায়ী-অস্থায়ী হকার। কোনো কোনো জায়গার ফুটপাত দখলে থাকে ফুটপাত সংলগ্ন দোকানের মালামালে। খাল-নালা দখল করেও করা হয়েছে নানা অবৈধ স্থাপনা। এ দৃশ্য চট্টগ্রাম শহরের। শহরের অধিকাংশ জায়গার রোজকার চিত্র এটি। অথচ সড়ক-ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করে নির্বিঘ্নে যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের হাঁটার উপযোগী করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতাও আছে। দীর্ঘদিন ধরে আইনটি পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেনি চসিক। তাই স্বস্তি মিলেনি নগরবাসীরও।
অবশ্য এবার আইনটি বাস্তবায়নে কঠোর হচ্ছে চসিক। নাগরিক অধিকার হরণকারী অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে সংস্থাটি। এজন্য উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী, ‘সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন রাস্তা, ফুটপাত, নালা-নর্দমা, ভূমি, গলি, পার্ক ইত্যাদি অবৈধ দখলদারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইনের তৃতীয় তফসিলের ১৮.৯ ও ১৮.১০ ধারামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ করবেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, অবৈধ দখলদারদের সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) হবে না। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ফুটপাতে মানুষ হাঁটবে। নালা-নর্দমা দখলমুক্ত থাকলে পানির স্বাভাাবিক গতি প্রবাহ ঠিক থাকবে। কাজেই এখানে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই। যেখানে যেখানে সড়ক-ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করা হবে সেখানেই ব্যবস্থা নেব আমরা।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফয়’স লেকসহ বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। হকারদের যেন ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ দিই তার জন্য নানা জায়গা থেকে তদবিরও আসে প্রতিনিয়ত। আমি বলে দিয়েছি, সেটা সম্ভব না। শহরে দিন দিন হকার বাড়ছে। তারা সবাই ফুটপাত দখল করে নিলে মানুষ হাঁটবে কোথায়?
দায়িত্বপ্রাপ্ত মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের মৌখিক নির্দেশে এতদিন দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। অনেক জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। আজও (রোববার) মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়েছি। অনেক সময় আমরা উচ্ছেদ করলে মানুষ প্রশ্ন তুলতেন। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু আইনে আছে সে আলোকে এখন অফিস আদেশ করা হয়েছে। মেয়র মহোদয় যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করব।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ১৮.৯ এবং ১৮.১০-এ বলা আছে, কর্পোরেশনের কোনো রাস্তা, নর্দমা, ভূমি, বাড়ি, গলি বা পার্কে কর্পোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত এবং এর শর্তাবলী ব্যতীত কোনো ব্যক্তি কোনো প্রকারে অবৈধভাবে প্রবেশ করবে না। কেউ অবৈধ পদার্পণ করলে কর্পোরেশন নোটিশ দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ পদার্পণকারী ব্যক্তিকে তার অবৈধ পদার্পণ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে। নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ের মধ্যে যদি তিনি এই নির্দেশ মান্য না করেন তাহলে কর্পোরেশন অবৈধ পদার্পণ বন্ধ করার জন্য যাথযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে যে ব্যয় হবে তা উক্ত পদার্পণকারীর কাছ থেকে আরোপিত কর হিসাবে আদায়যোগ্য হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, হকারমুক্ত ফুটপাত কিংবা হকারদের শৃক্সখলা আনয়নে অতীতে উচ্ছেদের পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসন, ব্যবসা করার জন্য সময় নির্ধারণ এবং তালিকা তৈরি করে পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগও নিয়েছিলেন সাবেক মেয়র ও প্রশাসক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুরোপুরি শৃক্সখলায় আসেনি হকাররা। তাই দুর্ভোগও কমেনি নাগরিকদের।
প্রসঙ্গত, নগরে ২৮১ কিলোমিটার ফুটপাত আছে। গতকাল আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট, জিইসি, বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের সিংহভাগ তো বটেই, সড়কও দখলে ছিল স্থায়ী ও ভাসমান হকারদের। এতে হাঁটাচলায় অসুবিধা হয় পথচারীর।