শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের অনুপস্থিতি ও অস্থির পরিস্থিতির সুযোগে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কগুলোতে অবাধে চলাচল শুরু করে ব্যাটারিচালিত রিকশা। পরে এ নিয়ে গত সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে নগরের প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোসহ এই ধরনের সকল অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে অবৈধ যানবাহন আটকসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সিএমপির ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে নগরজুড়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। অলিগলির পাশাপাশি প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটো। এছাড়া সন্ধ্যা নামলেই এবং বৃষ্টি হলেই মূল সড়কে বেড়ে যায় এসব রিকশার সংখ্যা। এ নিয়ে পুলিশের তদারকি তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন দুইবার করে বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ।
জানা যায়, দুর্ঘটনা, বিদ্যুতের অপচয় ও নগরের প্রধান সড়কে যানজট নিরসনসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম মহানগরে নিষিদ্ধ করা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ নিয়ে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয়। এরপর থেকে প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল কম থাকলেও অলিগলিতে চলতো ব্যাটারিচালিত রিকশা। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে অবাধে যত্রতত্র চলাচল শুরু করেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটো। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন থানা পুড়িয়ে দেওয়ায় পুলিশ এখনো কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেনি। যার কারণে সড়কে নানা অনিয়ম বন্ধে পুলিশকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে তেমন একটা দেখা যায়নি। এই সুযোগ বাধাহীনভাবে রাস্তায় নেমে পড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। যার কারণে অনেক সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, নগরের আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি ও লালখান বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রধান সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। বৃষ্টির দিন হওয়ায় সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, সড়কে এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে কোনো বৈধতা নেই। এছাড়া অটোরিকশা ব্যবহার করে চলে নানা অপকর্মে। এছাড়া অদক্ষ চালকের হাতেই এই গাড়ির স্টিয়ারিং। যত্রতত্র ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকে। পরে ফের নগরের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, এলাকাভিত্তিক থানা পুলিশ, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে ম্যানেজ করে নগরে চলে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা।
এই ব্যাপারে কয়েকজন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা বলেন, বাধ্য হয়ে চালাচ্ছি, আয় তো করতে হবে নইলে সংসার চালাবো কিভাবে। বৃষ্টির দিনে আমরা একটু সুযোগ বেশি পাই। এদিন পুলিশের তদারকি কম থাকে। আর এখন তো পুলিশের তেমন তদারকি নেই। এছাড়া আমরা ছোট গলিতে চালাই। মূল সড়কে উঠি না তেমন একটা। আর আমরা দাবি করবো এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার জন্য। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রিকশায় যাতায়াতকারী কয়েকজন জানান, ব্যাটারি রিকশা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণে যানজটের তীব্র সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এর একটি সুবিধার দিক হলো ব্যাটারি রিকশা চললে ভাড়ার দিক থেকে কিছুটা সাশ্রয় পাওয়া যায়। গ্যাসচালিত সিএনজি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে। আর পাহাড়ি অনেক পথ প্যাডেল রিকশা উঠতে পারে না।
এই ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্র্যাফিক) মাসুদ আহাম্মদ আজাদীকে বলেন, এসব অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন দিনে দুইবার অভিযান চলমান রয়েছে। আজকে (গতকাল) শুক্রবার ও বৃষ্টির দিন থাকায় একটু তদারকি কম হয়েছে। আর সনাতনীদের একটা প্রোগ্রাম থাকায় ওইদিকে বেশি মনোযোগ ছিল। যার কারণে তারা একটু সুযোগ পেয়েছে। শনিবার (আজ) থেকে আবার অভিযান অব্যাহত থাকবে। আশা করি শীঘ্রই সড়কে ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা কমে আসবে। তাদের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেওয়ার দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নগরের সড়কগুলো সংকীর্ণ, ব্যাটারি রিকশা অনুমতি দিলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। মানুষ চলাচল করতে পারবে না।