অবসরের ৬ মাসের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে ভাতা দেওয়ার নির্দেশ

| শুক্রবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের বেঞ্চ এ রায় দেয়। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। খবর বিডিনিউজের।

রায়ের সময় জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, এটা চিরন্তন সত্য যে শিক্ষকদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য তাদের অবসরভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে। এই অবসরভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন না।

এদিকে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতনের ১০ ভাগ কর্তনের বিপরীতে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, দশ ভাগ কর্তন করলে সে পরিমাণ সুবিধা শিক্ষকদের দিতে হবে। একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্ত কাম্য নয়।

পরে আইনজীবী ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে এমপিওভুক্ত স্কুলকলেজ ও মাদ্রাসায় ৫ লাখের বেশি শিক্ষককর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে ২০১৯ সালে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে আমরা বলেছিলাম, ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষককর্মচারীদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো। সেই কর্তন করা টাকাসহ সুবিধা অবসরের পর দেওয়া হতো। এই অবস্থায় ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও ৬ শতাংশের যে সুবিধা দেওয়া হতো সেটাই বহাল রাখা হয়। আমরা রিট আবেদনে ১০ শতাংশের সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। এরপর হাই কোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া আরও বলেন, রায়ে বলা হয়, ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের যেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অবসরের ছয় মাসের মধ্যে যেন অবসরকালীন সুবিধা দেওয়া হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান৮ অনুযায়ী, শিক্ষককর্মচারীদের মূল বেতনের ২ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল উল্লিখিত প্রবিধানমালায় শিক্ষককর্মচারীদের মূল বেতনের ২ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধান সংশোধন করে ৪ ও ৬ শতাংশ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর বিপরীতে প্রজ্ঞাপনে শিক্ষককর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষককর্মচারীদের এপ্রিল/২০১৯ মাসের বেতন থেকে ৪ এবং ৬ শতাংশ টাকা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়। এতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষককর্মচারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে আদেশ বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে তারা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এরপর শিক্ষককর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা বয়কট প্রশাসনপন্থীদের
পরবর্তী নিবন্ধতালা ও চার্জলাইটের পাত বানিয়ে আনা দেড় কেজি স্বর্ণ জব্দ