দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে চালা ভোগান্তির অবসান হতে চলেছে। সরু ও অতি বাঁকের খাগড়াছড়ি–দীঘিনালা সড়ক প্রশস্তকরণে কাজ শুরু হচ্ছে। দরপত্র শেষে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে। সবকিছু অনুকূল থাকলে দ্রুত সড়কটির সম্প্রসারণ কাজ শুরু হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি শুরু হবে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সরু সড়ক ও অতিরিক্ত বাঁকের কারণে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে খাগড়াছড়ি–দীঘিনালা সড়ক। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে প্রতি মাসে ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের পাশাপাশি সাজেকগামী পর্যটকবাহী যানবাহনের চাপ বাড়ায় নিরাপদ যাতায়াতের জন্য সড়ক প্রশস্ত ও বাঁক সরলীকরণের দাবি আসছিল স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবহন চালক ও পর্যটকদের পক্ষ থেকে। সড়ক প্রশস্তকরণের খবরে খুশি স্থানীয়রা। দীঘিনালা নয়মাইল এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য গণেশ ত্রিপুরা বলেন, ‘রাস্তা অত্যন্ত ছোট। বড় কোনো গাড়ি আসলে রাস্তা থেকে নেমে যেতে হয়। এছাড়া একটা গাড়িকে ক্রস করার মতো জায়গা রাস্তায় নেই। বাঁক ও উঁচু–নিচু সড়কের কারণে বাঁশ ও কাঠ বোঝাই ট্রাক প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। উল্টে যায় যাত্রীবাহী বাসও। সড়ক বড় হলে আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে।’ স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সোহানুর রহমান বলেন, ‘ খাগড়াছড়ি –দীঘিনালা সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাজেক পর্যটক কেন্দ্রসহ দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার মানুষও এই পথে যাতায়াত করে। কিন্তু ১২ ফুটের রাস্তায় যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি হয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এক দুবার বাস ও ট্রাক রাস্তার বাইরে ছিটকে পড়ে। সড়ক প্রশস্তকরণ স্থানীয় মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। অবশেষে সড়কটি দুই পাশে আরো ছয় ফুট বড় হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির। যাতায়াতের সময়ও কম লাগবে।’
চাঁন্দের গাড়ি (জিপ) চালক প্রদীপ ত্রিপুরা ও নিমাই দেবনাথ বলেন, ‘১৮ কিলিমিটার সড়কে বাঁক আছে ৬০ এর বেশি। যাতায়াতের সময় লাগে ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। সড়কটি বড় করা সময়ের দাবি ছিল। এই সড়কে জেলার অন্যান্য সড়কের তুলনায় কয়েকগুণ যানবাহনের চাপ বেশি। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হলে আমাদের দীর্ঘ কয়েক দশকের ভোগান্তি দূর হবে। দ্রুত সড়কটির কাজ শুরু করা উচিত। ’
খাগড়াছড়ি –দীঘিনালা ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ৯০ এর দশকে নির্মিত হয়। ভৌগলিক গঠনের কারণে খাগড়াছড়ির অধিকাংশ সড়ক আঁকাবাঁকা। ১৯৮০ সালে নিমির্ত এসব সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। উঁচু নিচু সরু সড়কে ট্রাক, বাস ও পর্যটকবাহী যানবাহন চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।
সাধারণত জেলা মহাসড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকার নিয়ম থাকলেও এই সড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট। উঁচু নিচু পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবহন নেতাদের।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে এখন গাড়ির চাপ বেড়েছে। সড়কে অতিরিক্ত বাঁকের কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তা প্রশস্ত করলে বাঁকের পরিমাণ কমে আসবে। আমাদের চালকেরা গাড়ি চালিয়ে স্বস্তি পাবেন র্দুঘটনাও কমে আসবে।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনা রোধে ও সাধারণ যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে জেলা সদরের খাগড়াপুর থেকে দীঘিনালা বাস স্টেশন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের দরপত্র শেষে ইতোমধ্যে প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। আশা করছি ২০২৬ সালের মার্চের আগেই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হবে। সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ৬ ফুট প্রশস্ত হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলে সুবিধা হবে।