অবশেষে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পেতে যাচ্ছেন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের ঘটনায় কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। গতকাল বুধবার কারা কর্তৃপক্ষের চাহিদা মতো ‘চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন’ সংক্রান্ত কাগজপত্র (প্রজ্ঞাপন) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন তার আইনজীবী। আইনজীবী মো. আরিফুর রহমান আজাদীকে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের কাগজপত্র চেয়ে করা আবেদনের উপর বুধবার সকালে আদালতে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেই শুনানিতে কারা কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আদালত (অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদ) সেগুলো গ্রহণ করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ডিভিশন সুবিধা পেতে আর কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, বাবুল আক্তারকে ডিভিশন দিতে আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও কারা কর্তৃপক্ষ বাবুল আক্তারকে ডিভিশন দেননি। তারা এমনটি না করলেও পারতেন। আমার মক্কেল তো সামাজিক স্ট্যাটাস সম্পন্ন। অথচ দেখুন, গত ১৭ মে থেকে তিনি অতিরিক্ত কোনো সুবিধা ছাড়া অন্যান্য বন্দীরের মতো কারাগারে অবস্থান করছেন।
কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি তাই বাবুল আক্তারকে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়নি। প্রক্রিয়ায় গরমিল ছিল। যে প্রক্রিয়ায় ডিভিশন সুবিধা চাওয়া হয়েছিল তাতে কারাবিধি অনুযায়ী বাবুল আক্তার ডিভিশন সুবিধা পান না। চাহিদা অনুযায়ী আদালতের মাধ্যমে বাবুল আক্তারের আইনজীবী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছেন এমনটি নজরে দিলে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় জেলার দেওয়ান তারিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পৌঁছলে যাচাই বাছাই শেষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাবুল আক্তার কোয়ারেইন্টাইনে আছেন। এ অবস্থায় তিনি ১৪ দিন থাকবেন।
প্রসঙ্গত, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পেয়ে থাকেন সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা। এছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যেকোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দিকে ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় তখন সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। যারা ডিভিশন পেয়ে থাকেন তাদের প্রত্যেকের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ারসহ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের খাবারও সাধারণ বন্দির চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী দেওয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন।
গত ১২ মে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে আসামি করে তার শ্বশুর নতুন একটি মামলা দায়ের করেন। একপর্যায়ে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আগের দিন ১১ মে ঢাকা থেকে ডেকে এনে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। শ্বশুরের দায়ের করা সেই মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১৭ মে বাবুল আক্তারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এ সময় বাবুল আক্তারের ডিভিশন চেয়ে তার আইনজীবী একটি আবেদন করলে আদালত সেটি আমলে নেন এবং কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। শ্বশুরের করা সেই মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন, মো. কামরুল ইসলাম সিকদার প্রকাশ মুসা (৪০), এহেতাশামুল হক প্রকাশ হামিদুল হক প্রকাশ ভোলাইয়্যা (৪১), মো. মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসাইন (২৮), মো. খাইরউল ইসলাম প্রকাশ কসাই কালু (২৮), মো. সাইদুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ সাকু প্রকাশ সাকু মাইজ্জা (৪৫) ও শাহ জাহান মিয়া (২৮)। এর মধ্যে কারাগারে থাকা মো. আনোয়ার হোসেন ও মো. মোতালেব প্রকাশ ওয়াসিমকে গত ১৬ মে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বাবুল আক্তারের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে শুরু থেকেই তারা কারাগারে ছিলেন। এছাড়া জামিনে থাকা মো. সাইদুল ইসলাম শিকদারকে নতুন মামলা (শ্বশুরের দায়ের করা মামলা) গত ১৩ মে রাঙ্গুনিয়ার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব।