সিলেটের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও অভিজাত হোটেল হচ্ছে ‘দ্যা প্যালেস’। পাঁচতারকা মানের ব্যয়বহুল ওই হোটেলে গত দুইদিন আতিথ্য গ্রহণ করেছেন জ্বালানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কমপক্ষে ৩০ কর্মচারী। তম্মধ্যে বৃহস্পতিবার অফিস না করেই এ ভ্রমণ বিলাসে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে যমুনা অয়েলের চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয় ও প্রধান ডিপোর কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে। তারা সকলেই যমুনা অয়েল সিবিএর সিনিয়র নেতা।
জানা গেছে, যমুনা অয়েলের ফতুল্লা ডিপোতে কর্মরতরা সরকারি বন্ধের দিনে (শুক্র ও শনিবার) সিলেটে পিকনিকে (ভ্রমণে) যান। তাদের পিকনিকে দাওয়াত পান চট্টগ্রামের ৬ সিবিএ নেতা। তারা হলেন, যমুনা অয়েল সিবিএ’র সভাপতি আবুল হোসেন। তিনি গুপ্তখাল প্রধান ডিপোতে অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব। তিনি আগ্রাবাদ প্রধান কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। সিবিএ সহ. সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বিভাগের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান, কোষাধ্যক্ষ ও প্রধান ডিপোর অফিস সহকারী আবু বক্কর ছিদ্দিক (এবি ছিদ্দিক), সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রধান ডিপোর গাড়ি চালক জয়নাল আবেদীন মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধান কার্যালয়ের অফিস সহকারী নাছির উদ্দিন। তারা বৃহস্পতিবার দুপুরেই সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এর আগে প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বিভাগের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান হাজিরা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করে অফিস ত্যাগ করেন। প্রধান ডিপোর এবি ছিদ্দিক ও আবুল হোসেন অফিসেই সকালের নাস্তা সেরে অফিস ত্যাগ করেন। সিবিএ নেতারা বৃহস্পতিবার আগেভাগেই সিলেটে গেছেন। শুক্রবার সকালে তাদের সাথে মিলিত হন ফতুল্লা ডিপোর ২৫ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এ ব্যাপারে জানতে আবদুল মান্নানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, তারা ডিপো ম্যানেজারের অনুমতি নিয়েই সিলেটে গিয়েছেন। তিনি বর্তমানে (শুক্রবার) দ্যা প্যালেস হোটেলে অবস্থান করছেন বলে প্রতিবেদককে জানান।
তবে আবুল হোসেনের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা প্রধান ডিপোর ম্যানেজার (বাল্ক) নজরুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আবুল হোসেন আমার অধীনে কাজ করেন। উনারা নেতা মানুষ। উনাদের সাথে আমাদের দেখা হয়। হাজিরা খাতা নীচে থাকে। ওখানে স্বাক্ষর করার পর হাজিরা খাতা এইচআর সেকশনে নিয়ে যায়।’ বৃহস্পতিবার দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি (আবুল হোসেন) বৃহস্পতিবার সকালে অফিসে এসেছেন শুনেছি। এরপরে কোথায় গিয়েছেন জানি না।’
সিলেটে ট্যুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অরিয়েন্ট ইকো ট্যুরিজমের ট্যুর ম্যানেজার সৈয়দ রিফাত জামান রিজভীর কাছে জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দ্যা প্যালেস সিলেটের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেল। এই হোটেলের কাপল রুম (এক কক্ষে দুইজনের থাকার ব্যবস্থা) প্রতি রাতের জন্য ১২ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। শুক্র ও শনিবার হলো বিশেষ দিন উপলক্ষে অফার থাকলে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে বুফে ব্রেক ফাস্ট, বুফে লাঞ্চ-ডিনারও থাকে। ওইদিন ১২ হাজারের নীচে কোন রুম পাওয়া যায় না। সপ্তাহের অন্যদিন হলে অতিথির সংখ্যার উপর নির্ভর করে রুম ভাড়া কিছুটা কম হতে পারে।’
যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (একাউন্টস) আবুল বশর দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘অফিস সহকারী আবদুল মান্নান আমার ডিপার্টমেন্টে পদায়িত। বৃহস্পতিবার সকালে আমাকে ফোন করে বলেছেন অফিসে আসবেন না। আমাদের অফিস প্রধান কার্যালয়ের তিন তলায়। কর্মচারীদের হাজিরা রেজিস্ট্রার থাকে নীচতলায়। আমি পরে জেনেছি তিনি বৃহস্পতিবার সকালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছিলেন।’
অফিসে হাজিরা দেখিয়ে কর্মচারীদের পিকনিকে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) ইজাজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি একেবারেই জ্ঞাত নই।’