মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এখন ইন্টারনেটের ব্যবহার সর্বাধিক। বলতে গেলে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ এবং দেশের মানুষ এখন ইন্টারনেট ছাড়া অচল। এই প্রযুক্তির রয়েছে অগণিত ভালো দিক কিন্তু, এই প্রযুক্তিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা দিন দিন যেহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে তাতে করে ভবিষতে আমরা এর লাগাম টানবো কীকরে সেটি আগেভাগেই ভাবা উচিত। আমরা প্রায়ই লক্ষ করি যে, শহরের বাসা-বাড়ি রাস্তা-ঘাট, স্কুল -কলেজ, পার্ক, রেষ্টুরেন্ট এবং গ্রামে গঞ্জের বিভিন্ন পাড়ায় এবং বাজারে এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা সবসময় স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে মত্ত থাকে। এদের বয়স বেশির ভাগই ১৮ বছরের নিচে। এসকল ছেলে মেয়েদের পিতা-মাতা তাদেরকে ফোনে খবরাখবর কিংবা নেট দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ক্লাসের প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করার জন্য স্মার্ট ফোন কিনে দিলেও এসমস্ত ছেলে মেয়েরা অতি উৎসাহী হয়ে এই মোবাইল নিয়ে দিনরাত পড়ে থাকে। এই মোবাইলে কখনও ফেসবুক, কখনও ফ্রি ফায়ার, কখনও ইউটিউব, আবার কখনও বন্ধুদের সাথে গ্রুপ চ্যাটিং করে দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় নষ্ট করে। এতে করে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, ক্ষুধামন্দা সহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় এছাড়া তারা ইন্টারনেটে অনেক সময় ভুলপথে চালিত হয় এবং বিভিন্ন কিছুর প্রলোভনে পড়ে যায়। যেহেতু তাদের বয়স কম ফলে এরা ইন্টারনেটের অনেক কিছুই বুঝতে সক্ষম হয়না। এর ফলে অনেক সময় তাদের জন্য পুরো পরিবারকে ঝামেলায় পড়তে হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদের রাত দিন সবসময় ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকা মোটেই উচিত নয়, কারণ এতে করে তারা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে যেতে পারে। আর একবার ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে তাদের সেখান থেকে বের করে আনা বেশ মুশকিল। প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ করেছে তেমনি কিছু ক্ষেত্রে বেশ সমস্যারও সৃষ্টি করেছে। ইন্টারনেটের সহজ এবং বহুল প্রচলনের ফলে এখন ৫/৬ বছরের বাচ্চারাও এর ব্যবহার শিখে গেছে। অনেক সময় মায়েরা তাদের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের মোবাইল থেকে গান শুনিয়ে কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কিছু পশুপাখির ছবি দেখিয়ে ঘুম পাড়ায় আর এটি যদি একসময় শিশুটির জন্য একপ্রকার নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, পরে শিশুটি গান কিংবা বিভিন্ন ছবি দেখা ছাড়া ঘুমায় না। এ বিষয়ে মায়েদের উচিত তার সন্তানকে আসক্ত হয়ে যায় এমন কিছুতে অভ্যস্ত না করা। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবকিছুই মানুষের হাতের নাগালে, অভিভাবকদের উচিত একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের কাছে সর্বপ্রথম প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো তুলে ধরা যাতে সে এর অপব্যবহারের দিকে ধাবিত না হতে পারে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি অতিপ্রয়োজনীয় এবং মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি, এ প্রযুক্তি ছাড়া বলতে গেলে পৃথিবীর অনেককিছুই অচল। আর তাই এই ইন্টারনেটে সুবিধাটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এখন পৃথিবীর সবদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। মানুষ চাইলেও এর থেকে দূরে থাকতে পারছে না। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। পৃথিবীর যে কোনো খবর এক নিমিষেই জানতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেট প্রযুক্তি পৃথিবীর মানুষকে একটি সুতোয় আবদ্ধ করে ফেলতে পেরেছে। এর বাইরে মহাকাশে কোন যান পাঠানো থেকে শুরু করে আকাশপথে উড়োজাহাজ চালানো সবখানেই এখন ইন্টারনেটের কারিশমা। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ছাড়া এসব যানের এখন কোনও মূল্যই নেই। জল, স্থল, আকাশ সব পথই এখন ইন্টারনেট প্রযুক্তির দখলে, ফলে এই প্রযুক্তি যে মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তা বলাই বাহুল্য। তবে এমন একটা সুন্দর এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিকে খুব বাজে ভাবেই ব্যবহার করছে কিছু অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে।
প্রকৃতপক্ষে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদের মোবাইল আসক্ত রুখতে পরিবারের বাবা মা’র ভূমিকাই মুখ্য। তার সন্তানটি কখন কীভাবে মোবাইল ব্যবহার করছে তার পিতা-মাতার চাইতে কেউ বেশি জানবেনা। পিতা-মাতা চাইলে তার সন্তানের মোবাইলে ইন্টারনেট আসক্তির লাগাম টানা কোনো ব্যাপারই না। সন্তানকে একটু বুঝিয়ে কিংবা চোখে চোখে রেখে অধিক ইন্টারনেট ব্যবহারের পেছনে সময় না দিয়ে কিছু সৃজনশীল কাজে সময় ব্যয় করতে উৎসাহিত করুন, যেমন, বই পড়া, শারীরিক কসরতের মাধ্যমে খেলাধুলা করা ইত্যাদি। এর বাইরে পরিবারের টুকিটাকি কিছু কাজেও আপনার সন্তানকে লাগাতে পারেন এতে করে সে ইন্টারনেটের দিকে খুববেশি সময় ব্যয় করতে পারবে না। এভাবে সে আস্তে আস্ত ইন্টারনেট আসক্তি থেকে বের হয়ে আসবে। তবে ইন্টারনেটের প্রতি খুববেশি আসক্তি হয়ে পড়লে আপনার সন্তানটিকে কাউন্সিলিং কারতে ভুলবেননা, এতে তার আসক্তি দ্রুতই কমে যাবে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে প্রজন্মকে ইন্টারনেট আসক্তি থেকে বাঁচাতে আমাদের নিজেদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সত্যিকথা বলতে কি বর্তমানে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদের ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে লাগামটানা বেশ জরুরি হয়ে পড়েছে কারণ এসব ছেলে মেয়েরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যত আর তাদের ওপরই নির্ভর করছে দেশ, সমাজ এবং পরিবারের ভবিষ্যত। তাই আসুন আমাদের আগামি দিনের ভবিষ্যতদের ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসি এবং তাদের এমন ভয়াবহ আসক্তি থেকে মুক্ত করি।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক