দীর্ঘ দিন পর বিপিএলে ফিরে ক্রমশ দুর্দান্ত এক দলে পরিণত হচ্ছে চিটাগাং কিংস। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে হার দিয়ে বিপিএল শুরু করা কিংস ম্যাচের পর ম্যাচ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ঢাকায় পরের ম্যাচে রাজশাহীর বিপক্ষে জয় দিয়ে ফিরেছিল কিংস। এরপর সিলেটে পরের দুই ম্যাচে দাঁড়াতেই দেয়নি প্রতিপক্ষকে। টানা তিন জয় নিয়ে নিজ ভেন্যু চট্টগ্রামে নেমেই কিংস কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিল নিজেদের দর্শকদের সামনে পাঁচটি ম্যাচই জিততে চায়। যার প্রথমটিতে জয় তুলে নিয়েছে মিথুনের দল।
যে খুলনার কাছে হেরে বিপিএল শুরু করেছিল চিটাগাং কিংস সেই খুলনাকে হারিয়ে টানা চতুর্থ জয়ই শুধু তুলে নেয়নি বরং দারুণ প্রতিশোধও নিয়েছে কিংস। সে ম্যাচে খুলনা ২০৩ রান করেছি। আর জিতেছিল ৩৭ রানে। এই ম্যাচে চিটাগাং করল ২০০ রান। আর জয় তুলে নিয়েছে ৪৫ রানে। মধুর প্রতিশোধ যাকে বলে। এই জয়ের ফলে ফরচুন বরিশালকে হটিয়ে আবার পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিল চিটাগাং কিংস।
গতকাল দিনের প্রথম ম্যাচে ঢাকাকে হারিয়ে কিছু সময়ের জন্য পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল তামিমের বরিশাল। কিন্তু চিটাগাং আবার সে জায়গাটা দখল করে নিল। ইমন ক্লার্কের দুর্দান্ত ব্যাটিং এর পর চিটাগাং কিংসের বোলারদের বিশেষ করে আরাফাত সানির ঘূর্ণি আর খালেদ আহমেদের আগুন ঝরানো পেসের সামনে পড়ে উড়ে গেল খুলনা। বলা যায় লেজ গুটিয়ে পালাল খুলনা টাইগার্স। নিজেদের মাঠে দুর্দান্ত জয় দিয়ে শুরু করা চিটাগাং কিংস এখন পরের চার ম্যাচে কেমন করে সেটাই দেখার অপেক্ষা। তবে কথায় আছে না মর্নিং শোজ দ্যা ডে, চিটাগাং কিংসের বেলায় যেন সেটাই হতে যাচ্ছে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা চিটাগাং কিংস তৃতীয় ওভারেই প্রথম ধাক্কাটা খায়। দলের সবচাইতে সফল এবং মারকুটে ব্যাটার ওসমান ফিরেন ৭ বলে ১০ রান করে। রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান আবু হায়দার রনি। শুরুতে খুলনা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হলেও দ্বিতীয় উইকেটে পারভেজ হোসেন ইমন এবং গ্রাহাম ক্লার্ক মিরাজের সিদ্ধান্তের ভুল প্রমাণ করতে থাকে।
বলা যায় খুলনার বোলারদের কচু কাটা করতে থাকে এই দুই ব্যাটার। যেখানে ক্লার্ক যেন তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন। সদ্য ঘোষিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা পাওয়া ইমন শুরুতে একটু সময় নিলেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু বড় করতে পারলেন না নিজের ইনিংসটাকে। ২৯ বলে ৩৯ রান করে একেবারে সীমানায় আফিফের হাতে ধরা পড়েন মোহাম্মদ নেওয়াজের বলে। চারটি ছক্কা মেরেছেন এই ওপেনার। মাত্র ৬২ বলে ১২৮ রানের এই জুটি ভাঙলেও তাণ্ডব থামেনি ক্লার্কের। ইনিংসের ১৬ তম ওভারে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ইংলিশ ব্যাটার। ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা ক্লার্ক পরের ৫০ রান তুলতে খেলেছেন মাত্র ২০ বল। ৪৮ বলে ৭টি চার এবং ৬টি ছক্কার সাহায্যে সেঞ্চুরি তুলে নেন ক্লার্ক। এটি এবারের বিপিএলে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। অবশ্য সেঞ্চুরি করার পর আর মাত্র দু বল টিকেছিলেন ক্লার্ক।
সালমানের বলে নেওয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ক্লার্ক ১০১ রান করে। পরের ওভারে ফিরেন শামীম হোসেন। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও ১৩ বলে ১৬ রান করে ফিরেন শামীম। ইমন এবং ক্লার্ক যখন ব্যাট করছিল তখন মনে হচ্ছিল বিপিএলের রেকর্ড গড়া স্কোর করবে চিটাগাং কিংস। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পর তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে থাকে চিটাগাং এর ব্যাটিং। ফলে দারুন সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও ২০০ রান সংগ্রহ করেছে চিটাগাং কিংস। অধিনায়ক মিথুন ১১ রান ছাড়া শেষ দিকের ব্যাটাররা কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। এবারের বিপিএলে তৃতীয়বারের মতো দুইশ রানের ইনিংস গড়ল চিটাগাং। আগের দুটি ছিল রাজশাহীর বিপক্ষে ২১৯ এবং সিলেটের বিপক্ষে ২০৩। খুলনা টাইগার্সের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন সালমান ইরশাদ এবং মোহাম্মদ নেওয়াজ।
২০১ রানের বিশাল টার্গেট। সে লক্ষ্যে যেভাবে ব্যাট করা দরকার রাজশাহীর শুরুটা তার ঠিক উল্টো। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরলেন ডম শিবলে। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ এসে দারুন শুরু করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না বেশিদূর যেতে। শরীফুলের বলে মোহাম্মদ মিথুনের দারুন এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ১৯ রান। মেরেছেন ৩টি চার এবং একটি ছক্কা। মোহাম্মদ ওয়াসিম এসে নিজের প্রথম ওভারেই ফেরালেন খুলনার ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে। ৪২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুকছে তখন খুলনা টাইগার্স। সে খাদের কিনারা থেকে আফিফ–রসুলিরা। দলকে ৬৮ রানে রেখে আলিস আল ইসলামের বলে ১৫ বলে ২০ রান করে ফিরেন আফিফ। পরের ওভারে নিজের প্রথম ওভার বল করতে এসে এবার আরাফাত সানির ধাক্কা। তার শিকার মাহফুজুর রহমান রাব্বি। ২ রান করে ফিরেন এই যুবা। এরপর ডরউইচ রসুলি এবং মোহাম্মদ নেওয়াজ মিলে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। ৪৩ রান যোগ করেছিলেন দুজন। কিন্তু পরপর দুই ওভারে ফিরেন দুজন। আরাফাত সানির শিকার হয়ে ফিরেন ৩১ বলে ৩৭ রান করা রসুলি। আর পরের ওভারে খালেদ আহমেদের বলে ২০ বলে ২৫ রান করে ফিরেন নেওয়াজ। পরের ওভারে আবার আরাফাত সানির আঘাত। এবার আবু হায়দার রনিকে রানের খাতা খুলতে দেননি সানি।
পরের ব্যাটাররা চেষ্টা করেছেন হারের ব্যবধান কিছুটা কমানোর। যা শেষ পর্যন্ত ১৫৫ রানে থামায় খুলনা টাইগার্সকে। চিটাগাং কিংসের পক্ষে ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন আরাফাত সানি। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শরীফুল ইসলাম এবং খালেদ আহমেদ।