সম্ভাবনা থাকলেও চট্টগ্রামের পর্যটন খাতের উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ নেই। এর ফলে এখানকার পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বেসরকারিভাবে পাঁচ তারকা হোটেলসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চললেও পর্যটন কর্পোরেশনের ভূমিকা বরাবরই প্রশ্নের মুখে রয়েছে।
সাগর, নদী ও পাহাড়ের সমন্বয় পৃথিবীর খুব বেশি স্থানে নেই। পাহাড় ও নদীর পাশাপাশি অনেক ঝরনা, কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক লেক মিলে চট্টগ্রামে প্রকৃতির অপার আয়োজন। এছাড়া রয়েছে পুরাকীর্তি ও নানা ঐতিহাসিক স্থান। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’স লেক, সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়, ফৌজদারহাট সৈকত, গুলিয়াখালী সৈকত, বাঁশবাড়িয়া সৈকত, বাটালি হিল, পারকি সমুদ্র সৈকত, মহামায়া লেক, মুহুরী প্রজেক্ট, ফটিকছড়ির মন্দাকিনি, হালদা ভ্যালি, সহস্র্রধারা ঝরনা, রূপসী ঝরনাসহ রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান।
চট্টগ্রামে রয়েছে চেরাগী পাহাড়, বিভিন্ন আউলিয়ার মাজার, মাস্টারদা সূর্যসেনের স্মৃতি বিজড়িত অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের স্থান, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতি বিজড়িত পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব, বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওয়ার সিমেট্রি, আদালত ভবন, সিআরবি, রেলওয়ে স্টেশন, পাথরঘাটা গির্জা, বৌদ্ধ মন্দির, চন্দনপুরা মসজিদ, কদম মোবারক মসজিদসহ ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা।
এত কিছু থাকার পরও চট্টগ্রামের পর্যটনের বিকাশে চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। পর্যটনের বিকাশে পর্যটন মন্ত্রণালয় ‘টেকসই পর্যটন, উন্নয়নের মাধ্যম’ শীর্ষক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল। অথচ চট্টগ্রামে কোনোকিছু করা হয়নি। চট্টগ্রামে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি মোটেল আছে। দীর্ঘদিন অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকার পর এটি পুনঃনির্মাণ করা হলেও তা চট্টগ্রামের পর্যটনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে অভিমত পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের চেয়ে যেকোনো বিচারে কম সৌন্দর্যের পাতাইয়া কিংবা ফুকেট বিচকে পুঁজি করে থাইল্যান্ড কোটি কোটি ডলার আয় করছে। লংকাভি কিংবা পেনাংয়ের মতো বিচকে পুঁজি করে মালয়েশিয়ার আয় শত কোটি ডলার। ইন্দোনেশিয়ার বালির চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত অনেক বিস্তৃত, অনেক বেশি সুন্দর। বালির আয় দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় বাজেট ফুলে ফেঁপে ওঠে। সেই অনুপাতে কক্সবাজারের আয় চোখে পড়ার মতো নয়। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ কেবলমাত্র পাহাড় আর সাগরকে ভিত করে নান্দনিক সব পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এরকম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও তা হয়নি। তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি খাত নানাভাবে বিকশিত হয়েছে। কিন্তু পর্যটন খাত বিকশিত হয়নি। তিনি মনে করেন, চট্টগ্রামের সাগর এবং পাহাড়কে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা গেলে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভব। অথচ উদ্যোগ এবং সদিচ্ছার অভাবে তা হচ্ছে না। পতেঙ্গা বিচ থেকে শুরু করে কর্ণফুলী নদীকে পুঁজি করে চট্টগ্রামে নানা ধরনের বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও তা হচ্ছে না। চট্টগ্রামে নতুন কোনো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দূরের কথা, যা আছে তা–ও ঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামে ট্যুর ব্যবসার সাথে জড়িত মোহাম্মদ সাজ্জাদুল আনোয়ার আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে পর্যটন বলতে কিছুই নেই। এখানে কোনো পর্যটক আসে না। কিছু কিছু ব্যবসায়ী এলেও পর্যটক আকর্ষণের কোনো উদ্যোগ চট্টগ্রামে নেই। অথচ সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এখানে চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব। পার্বত্য চট্টগ্রামেও গড়ে তোলা যায় চমৎকার সব পর্যটন কেন্দ্র।
বিশ্বের নানা দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসকে নিজেদের পর্যটন এলাকাগুলোকে উপস্থাপন করার দায়িত্ব দিলে সুফল মিলত। তিনি বলেন, পর্যটন খাতে আমাদের চেয়ে কম সুযোগ নিয়েও পৃথিবীর অনেক দেশ নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছে। অথচ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তা কাজে লাগাতে পারছি না।