চীনের শানডং প্রদেশে বাড়ির সামনে থেকে দুই বছর বয়সী ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল মানবপাচারকারীরা। এরপর ২৪ বছর ধরে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেশজুড়ে পাঁচ লাখ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে হন্যে হয়ে ছেলেকে খুঁজে বেড়িয়েছেন বাবা। অবশেষে মিলেছে ছেলের খোঁজ। চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানায়, পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষা করে বাবা-ছেলের পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছে। সন্দেহভাজন দুই অপহরণকারীর সন্ধান পাওয়ার পর তাদেরকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা। খবর বিডিনিউজের।
বিবিসি জানায়, চায়না নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার বিনিময়ে বিক্রির উদ্দেশে শিশু অপহরণের পরিকল্পনা নিয়েই শানডং প্রদেশের বাসিন্দা গুয়ো গ্যাংটাঙয়ের ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল অপহরণকারীরা। ১৯৯৭ সালের ঘটনা। সেদিন বাড়ির সামনেই খেলছিল গুয়ো গ্যাংটাঙের ছেলে। শিশুটিকে দেখতে পেয়ে এক নারী তাকে ধরে নিয়ে কাছের একটি বাস স্টেশনে চলে যায়। সেখানে অপেক্ষায় ছিল ওই নারীর এক সহযোগী। পরে দুইজন একটি বাসে চড়ে শিশুটিকে পাশের হেনান প্রদেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, গুয়োর ছেলে এখনও হেনান প্রদেশে বাস করে। তাকে সেখান থেকেই পাওয়া গেছে। সাংবাদিকদের গুয়ো বলেন, ছেলেকে পেয়েছি, এখন থেকে সবকিছুতেই খুশি খুশি লাগবে। ছেলে হারানোর পর চীনের ২০টি প্রদেশে মোটরসাইকেলে করে ঘুরেছেন গুয়ো গ্যাংটাং। এ সময় দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙেছে, রাস্তায় ডাকাতের কবলে পড়েছেন, দশটি মোটরসাইকেল ভেঙেছে, কিন্তু কোনও কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। সন্তানের ছবির ব্যানার নিয়ে ছুটে বেরিয়েছেন গুয়ো। জীবনের জমানো সব সম্পদ তিনি খরচ করেছেন ছেলেকে খুঁজে বের করার এ অভিযানে। কখনও টাকা শেষ হয়ে গেলে রাস্তায় ঘুমিয়েছেন, আবার কখনও ভিক্ষাও করেছেন।
সন্তানকে খুঁজতে খুঁজতে চীনের নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করা একটি সংগঠনের বিশিষ্ট সদস্য হয়ে ওঠেন গুয়ো। অন্তত সাতজন বাবা-মায়ের কাছে তাদের অপহৃত সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করেছেন তিনি। গুয়ো গ্যাংটাংয়ের ছেলেকে পাওয়া যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা গুয়োর সমর্থনে বার্তা পাঠাতে শুরু করে। মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম উইবোতে একজন লেখেন, অন্য বাবা-মা হলে হয়ত অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিতেন। কিন্তু তিনি অসাধারণ, আমি সত্যিই আনন্দিত। চীনে কয়েক দশক ধরে শিশু অপহরণ বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালের এক হিসেবে দেখা গেছে, দেশটিতে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ হাজার শিশু অপহৃত হয়। এদের অনেককেই দত্তক হিসাবে দেশে-বিদেশে বিক্রি করা হয়।