চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসদরের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের ৪৩ ঘণ্টা পর সাতকানিয়ার শিশুতল বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে চন্দনাইশ থানা পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ীর নাম নুর মোহাম্মদ (৪২)।
তিনি গত শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে চকরিয়া থেকে ফেরার পথে লোহাগাড়া উপজেলা থেকে অপহৃত হন।
জানা যায়, উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা সদর এলাকার মৃত সফর আলীর পুত্র আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ ব্যবসায়িক কাজ শেষ করে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে দোহাজারীতে ফিরছিলেন কিন্তু গভীর রাত ২টার দিকে লোহাগাড়া পুরাতন থানা এলাকায় পৌঁছলে তিনি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গাড়ি থেকে নামলে স্থানীয় কয়েকজন তাকে চোর বলে মারধর করে তার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে চোখ বন্ধ করে সেখান থেকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়।
পরে অপহণকারীরা তার ছোট ভাই মো. রাসেলের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ব্যাপারে গতকাল রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে চন্দনাইশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবদুল হালিমের নেতৃত্বে পুলিশদল তাকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে।
এক পর্যায়ে অপহরণকারীর তথ্য পেয়ে তিনি লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুচ্ছফা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে গতকাল রাত ৯টায় অপহরণকারীরা ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদকে সাতকানিয়া উপজেলার শিশুতল বাজার এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে নুর মোহাম্মদ দোহাজারী পৌরসভার মো. লোকমান হাকিমের নিকট তাকে ফেলে যাওয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানালে তিনি পুলিশকে অবহিত করেন। তারপর দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ রাত সাড়ে ৯টায় শিশুতল এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে।
দোহাজারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল হালিম জানান, অপহরণের অভিযোগ পেয়ে তিনি অপহরণকারীর নাম সংগ্রহ করে স্থানীয় চেয়ারম্যান নরুচ্ছফা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন। পরে চেয়ারম্যান অপহরণকারী লোহাগাড়া সদর মহাজনপাড়ার ইদ্রিস ড্রাইভারের ছেলে বাবলুকে ঢেকে আনলেও সেখানে পুলিশ পৌঁছার পর বাবলুকে দেখতে পাননি। তবে তার ২ ভাই শামসুল আলম (৫০) ও আবুল মনসুর(৩০)কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেখান থেকে দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
তিনি আরো জানান, অপহরণকারী বাবলুর বাড়িতে গিয়ে টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং সেখান থেকে লাঠি, ইয়াবা ব্যবহারের সরঞ্জাম, ইলেকট্রিক শক ও হাতের আঙ্গুল কাটার যন্ত্র উদ্ধার করা হয়।
লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুচ্ছফা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে অবগত হয়ে বাবলুকে ঢেকে আনেন এবং ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। এসময় বাবলু ২৫ ডিসেম্বর রাতে চোর ধরার কথা জানিয়ে মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান। এসময় তিনি মোবাইল ও টাকা নিয়ে আসতে বললে বাড়ি থেকে আনার কথা বলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় বাবলু।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন সরকার জানান, নুর মোহাম্মদ নামে দোহাজারীর এক ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়েছে মর্মে গতকাল ২৭ ডিসেম্বর থানায় একটি ডায়েরি দায়ের করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অপহৃত ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, “২৫ ডিসেম্বর রাতে তাকে অপহরণের পর চোখ বেঁধে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ৩/৪ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ বন্ধ থাকায় কোথায় নেয়া হয়েছে তা বলতে এবং কাউকে চিনতে পারেননি তিনি।
এসময় তাকে বেদম মারধর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তবে গতকাল রাতে তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেয়ার আধা ঘণ্টা আগে অপহরণকারীদের মুখে বাবলু নামের কাউকে পুলিশ খুঁজছে বলতে শুনেছেন। এর চেয়ে তিনি বেশি কিছু বলতে পারেননি।