অপহরণের ভয়ে বাগানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না পেয়ারা ও লেবু বাগানিরা

চন্দনাইশে সন্ত্রাসীদের উপদ্রব

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উপদ্রব আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার কাঞ্চননগর পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকজন কৃষককে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় বেশ আতংক বিরাজ করছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী গ্রামবাসী, কৃষক, পেয়ারা ও লেবু চাষের সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে কাঞ্চননগর এলাকায় পেয়ারা তুলতে বাগানে যাওয়ার সময় একসাথে ১৪ জনকে অপহরণ করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। পরে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে অপহৃতদের রেখে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আবদুল আলীম জানান, বিগত ৩ মাসের মধ্যেই ৫ থেকে ৬ বার অপহরণের ঘটনা ঘটায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। প্রতিবারই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে অপহৃতরা। গত সপ্তাহে ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড থেকে ৪ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ গত সোমবার ভোরে পেয়ারা আনতে বাগানে যাওয়ার পথে খরনা খাল থেকে একসাথে ১৪ জন কৃষককে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। অপহৃতরা ইউনিয়নের ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অপহৃতদের গভীর পাহাড়ে পটিয়ার খরনা সীমান্তে নিয়ে বেদম মারধর করে বেঁধে রাখে। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে অপহৃতদের স্বজনকে ফোনে জানানো হয় জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের নিয়ে যেতে। মুক্তিপণ না দিলে এক এক করে সবাইকে মেরে গহীন পাহাড়ে পুঁতে ফেলা হবে। পরবর্তীতে ধারদেনা করে অপহৃতদের কয়েকজন স্বজন ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে গেলেও ৫০ হাজার টাকার কমে কাউকে ছাড়তে রাজি হয়নি সন্ত্রাসীরা। পরে তারা সেখান থেকে ফেরত এসে বিষয়টি গ্রামবাসীকে জানায়। পরবর্তীতে দেড়শ থেকে দুইশ গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। একত্রিত হওয়ার সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীরা অপহৃত ১৪ জনকে বাঁধা অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়। এদিকে অপহৃতদের নিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। মেম্বার আবদুল আলীম জানান, দিনদিন যেভাবে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাতে পেয়ারা ও লেবু বাগানিরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। অপহরণের ভয়ে পেয়ারা চাষিরা পেয়ারা তুলতে বাগানে যেতেও এখন ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয় পেয়ারা চাষি মো. নাসির উদ্দীন, নুর উদ্দীন, কামাল হোসেনসহ অনেকেই জানান, দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জন করা কাঞ্চন পেয়ারার অধিকাংশ বাগানই কাঞ্চননগর ও খরনা পাহাড়ি অঞ্চলে। কৃষকরা প্রতিদিন এসব বাগান থেকে শত শত পুটলি পেয়ারা সংগ্রহ করে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে লেবু উদপাদন হয় এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে। এ অঞ্চলের পেয়ারা ও লেবু বিক্রির টাকা চন্দনাইশের অর্থনীতিতে বড় একটি ভূমিকা রাখে। প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে শত কোটি টাকার পেয়ারা ও লেবু বিক্রি হয় এ অঞ্চলের বাগানগুলো থেকে। বর্তমানে যেভাবে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে অপহরণের ভয়ে কৃষকরা বাগানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার দাবি জানান পেয়ারা ও লেবু বাগানিরা।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরান আল হোসাইন জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণের বিষয়ে থানায় এখনো পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। এরপরও লোকেমুখে শুনে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে উপজেলার কেউ এ অপকর্মের সাথে জড়িত আছে কিনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকামাল চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দীনসহ চারজন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধলাশটির পরিচয় মিলেছে, এটা কি পরিকল্পিত হত্যা?