অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ কাটায় ভেঙেছে ৬০ কাঁচা ঘর, তলিয়ে গেছে ফসলি জমি

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া প্রতিনিধি

| রবিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৫২ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সীমান্ত এলাকায় বনবিভাগের আড়াই হাজার একর বন দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি লেকের বাঁধ কেটে দিয়েছে বনবিভাগ।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদরের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন বাঁধ কেটে দিয়ে উপরোক্ত বনভূমি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

এ সময় বন বিভাগের প্রায় ৬০ জন বনকর্মী ও ৩০ জন শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।

তবে অপরিকল্পিত০ভাবে কেটে দেওয়া এই লেকের পানিতে প্লাবিত হয়ে সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের হাট-বাজার, স্কুল, মাদ্রাসা, গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

হঠাৎ পানিতে নষ্ট হয়েছে শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল, ভেঙে গেছে অন্তত ৬০টি কাঁচা ঘরবাড়ি। তলিয়ে গেছে ৩ শতাধিক কৃষকের ৭ হাজার হেক্টর বোরোধান সহ ফসলি জমির আলু, মরিচ, শসা ক্ষেতসহ শীতকালীন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত মৎস্য খামারের মাছ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিকট আওয়াজ দিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করে।

ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী, কৃষি কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস দৈনিক আজাদীকে বলেন লোহাগাডা উপজেলার বনভূমি অবৈধভাবে দখল করে বাঁধ তৈরির একটি সংবাদ গণমাধ্যমে দেখেছি, এরপর বনবিভাগ ঐ বাঁধটি কেটে দিয়েছে।

আমাদের অবহিত না করেই অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি কেটে দেওয়ার কারণে সাতকানিয়া অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৬০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে, একটি স্লুইস গেইট ভেঙে গেছে, শতশত মৎস খামারের মাছ ভেসে গেছে, শতশত দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।

পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ৭ হাজার হেক্টর বোরোধান সহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পুরোপুরি নির্ণয় করতে পারিনি, সবগুলো সংস্থা কাজ করছে, রাতের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পুরোপুরি জানা সম্ভব হবে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৩ মেট্রিকটন চাল ও ১৫০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, পরবর্তীতে সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ কেটে লাখো মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কোন মানেই হয়না, আমরা এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে জানাব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন বিভাগের জায়গা উদ্ধারের জন্য আমাদের কাছে কাছে পানি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোন ধরনের বিকল্প ছিলোনা। পানি যাওয়ার জন্য ছোট একটা রাস্তা করে দেওয়া হলেও রাতে পানির অতিরিক্ত স্রোতের তোড়ে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

৬০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া এবং ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার বিষয়ে বললে দায় এড়িয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই আমরা ৫টি বাড়ি ভেঙে যাওয়ার কথা শুনেছি এবং অল্প পরিমাণ কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সেখানে আমাদের মানুষ জন আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের সব স্কুল ছুটি
পরবর্তী নিবন্ধবৈদ্যুতিক গোলযোগে দেড় ঘণ্টা বন্ধ মেট্রোরেল, ভোগান্তিতে যাত্রীরা