অন্য কক্ষে থাকায় বেঁচে যান মা ও ১৫ মাসের শিশু

ঘুমন্ত তিন শিশুর মৃত্যু

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১৭ মার্চ, ২০২১ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিনের মতো খাওয়া শেষ করে সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে মাটির ঘরের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে তিন ভাইবোন। ১৫ মাসের পুত্র সন্তান নিয়ে আরেক কক্ষে ঘুমান মা জেসমিন আক্তার কাজল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুনের তাপে জেগে উঠেন মা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কোলের শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ততক্ষণে অপর কক্ষে ঘুমন্ত তিন শিশু সন্তান আগুনে পুড়ে গেছে। আগুন লাগার খবরে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে দেখতে পায়, দাউ দাউ করে জ্বলছে টিনের চালার মাটির ঘরটি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভেতর থেকে বের করে আনা হয় একে একে তিনটি পোড়া দেহ। একসঙ্গে তিন শিশুর পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর হারবাংয়ের সাবানঘাটা গ্রামে। মারা যাওয়া তিন শিশু ওই গ্রামের জাকের হোসেন মিস্ত্রির পুত্র-কন্যা। নিহতরা হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া জিহাদুল ইসলাম (১২), তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ফৌজিয়া জান্নাত মীম (১০) ও আফিয়া জান্নাত মিতু (৭)।
একসঙ্গে তিন সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক মা কাজল বারবার মুর্ছা যান। এ সময় স্বজনেরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। গতকাল সকালে তিনি জানান, তার স্বামী সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের পদুয়ার একটি মাজারে ওরশে যান। তাই রাতের খাওয়া শেষ করে ৯টার দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ আগুনের তাপ গায়ে লাগলে জেগে উঠেন এবং কোলের শিশু আবদুল্লাহ আল মাহীরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু ততক্ষণে তিন সন্তান পুড়ে মারা যায়।
তার ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে আশপাশের অনেকের দাবি, মশার কয়েল থেকে আগুন লেগেছে। কাজল জানান, তাদের বাড়িতে মশার কয়েল জ্বালানো হয় না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিন শিশু ঘুমিয়ে থাকা কক্ষটির চারদিকে আগুনবেষ্টিত হওয়ায় কেউ বাঁচেনি। অন্য কক্ষে যারা ছিলেন তারা বেঁচে গেছেন।
খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে বাড়ি আসেন বাবা জাকের হোসেন মিস্ত্রি। তিনি বলেন, আমার নিষ্পাপ তিন সন্তানের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে তিন শিশুর লাশ দাফন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ এবং ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে সহায়তা দেওয়া হবে।
চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
চকরিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমির হোসেন আজাদীকে বলেন, এত বড় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেল। কিন্তু কেউ ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
চকরিয়ার ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে আরও ২৬ মৃত্যু শনাক্ত ১৭১৯
পরবর্তী নিবন্ধএবার পুত্র সন্তানের বাবা হলেন সাকিব