কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ অন্যায় করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষ সুশাসন চায়। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কেউ অন্যায় করলে ছাড় পাবে না। খবর বাংলানিউজের।
সামপ্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কারণে দল ও সরকারকে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। এই সব অপকর্মের সাথে দলের কিছু লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কেউ কেউ প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসেনি বলে জানায় দলীয় সূত্র। সভায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে মানুষের পাশে না দাঁড়ানোয় বিএনপির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তারা কি মানুষের জন্য কিছু করতে পারত না? বিএনপির যারা ব্যবসায়ী তারাও কি মানুষকে সাহায্য করতে পারত না? করোনার সময় যদি আওয়ামী লীগ না থেকে অন্য পার্টি ক্ষমতায় থাকত তাহলে মানুষের যে কি দুর্দশা হতো, তা কল্পনাই করা যায় না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগকে যারা গড়ে তুলেছেন সেই বর্ষিয়ান জননেতাদের যেন কোনোভাবে অসম্মান করা না হয়। প্রবীণ ও ত্যাগী নেতারা যেন কমিটি থেকে বাদ না পড়েন।
সূত্র জানায়, সভায় বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনিক সম্পাদকরা সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ৮টি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেওয়া হয়। এ সময় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যেসব জেলায় সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেই সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে ফেলতে হবে। সম্মেলনের পর যেসব জেলায় এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি তা দ্রুত করার নির্দেশ দেন তিনি। এ ব্যাপারে বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি সম্মেলন হয়ে যাওয়া সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও দ্রুত দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রস্তাবিত কমিটিতে যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে বা কাউকে নিয়ে আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। আগামীতে যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। করোনার কারণে যেকোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে সন্তোষ : বিডিনিউজ জানায়, করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সে কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। গতকাল কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে মাস্ক কাণ্ড, রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারিসহ নানা বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সমালোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে বা অধিদপ্তর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু একটা কথা তো স্বীকার করতে হবে যে, যখন যেটা নির্দেশ দিয়েছি, আমি বলেছি এটা ইমোর্জেন্সি আগে করতে হবে, জিনিস কিনতে হবে, মানুষের চিকিৎসা দিতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। তারা কিন্তু সেইভাবেই কাজ করেছে। তারা কাজ করেছে বলেই কিন্তু আমরা এই করোনাটাকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করে যাওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আমরা কিন্তু দেশটাকে সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা রাখতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মহামারীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় তার দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
মহামারী থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধারে সরকারি প্রচেষ্টা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যে বাংলাদেশে আমাদের কোনোমতে যেন অর্থনীতিটা থেমে না যায়। মহামারীতে নানা প্রণোদনা দেওয়ার পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।