‘অন্ধকার সময়ে গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে’ শান্তির নোবেল

মারিয়া কোরিনা ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

| শনিবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ভেনেজুয়েলার জনগণের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে’ ভূমিকার জন্য দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো পাচ্ছেন এবারের শান্তির নোবেল। নরওয়ের নোবেল ইন্সটিটিউট গতকাল শুক্রবার অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০৬তম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নাম ঘোষণা করে। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য এবার ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার। ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা নিকোলাস মাদুরো সরকারের অন্যতম কড়া সমালোচক ৫৮ বছর বয়সী মাচাদো একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। ২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার আদালত তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বাধা দেয়, যেন তিনি নিকোলাস মাদুরোকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারেন। খবর বিডিনিউজের।

নোবেল কমিটি তাকে এমন এক নারী হিসেবে বর্ণনা করেছে, যিনি অন্ধকার সময়েও গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন। ‘গণতন্ত্রের পক্ষে নিরলস সংগ্রামের স্বীকৃতি’ হিসেবে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার তারই প্রাপ্য, বলেছে তারা। মাচাদো গত নির্বাচনের আগে ভেনেজুয়েলার বিভক্ত বিরোধীদলগুলোকে একত্র করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি নির্বাচন করতে না পারলেও নিজের পরিবর্তে প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেসের পক্ষে জনসমর্থন সংগঠিত করেন। ভোটকেন্দ্রগুলোর ফলাফল গনজালেসের জয়ের ইঙ্গিত দিলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন পরে মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করে।

মাচাদো আত্মগোপনে থেকেও গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি দেশ ছাড়তে অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জানুয়ারিতে এক বিক্ষোভে দেখা দেন, পরে তাকে গ্রেপ্তার করে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

মাচাদো এমন সময়ে এ পুরস্কার পেলেন যখন ট্রাম্প বারবার জনসমক্ষে বলেছেন যে নোবেল শান্তি পুরস্কার তারই প্রাপ্য। মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোরও কট্টরবিরোধী।

গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মেনে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে হামাস ও ইসরায়েল বুধবার চুক্তিতে উপনীত হলেও নোবেল কমিটি তার আগেই কাকে এ বছরের পুরস্কার দেওয়া হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগে বিশেষজ্ঞরাও এ বছর ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হিসেবেই দেখছিলেন। নোবেল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ভাটনে ফ্রিডনেসের কাছেও ট্রাম্পের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের একাংশও মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতেই শান্তি পুরস্কার দেখতে চেয়েছিল, এমন চাপ কীভাবে সামলেছেনএ প্রশ্নের উত্তরে ফ্রিডনেস বলেছেন, নোবেল কমিটি প্রতি বছরই নানান ধরনের প্রচারণা ও ‘গণমাধ্যমের উত্তেজনা’ দেখে এসেছে। আলফ্রেড নোবেলের কাজ ও উইলের ভিত্তিতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই।

হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের হাত ধরে গড়ে ওঠা তৃণমূল সংগঠন ‘নিহোন হিদাংকিয়ো’ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য গতবছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন : এদিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রকামী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদোকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস আজ এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন, আমি মারিয়া করিনা মাচাদোকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে অভিনন্দন জানাই, যিনি তার প্রিয় ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র রক্ষায় সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছেন। নির্যাতন ও প্রতিবন্ধকতার মুখে তিনি কখনো থেমে যাননি। তার দেশ ও জনগণের জন্য একটি স্বাধীন ও ন্যায়পরায়ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অটল প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলোচনায় ৮ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রার্থী
পরবর্তী নিবন্ধনীতি আদর্শে আমৃত্যু অবিচল ছিলেন বদিউল আলম চৌধুরী