অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ফখরুলের

| শুক্রবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মনে করেন, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এই প্রশ্ন তোলেন। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি এ কথা গতকালও বলেছি, আমাকে একজন সাংবাদিক ভাই এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে নির্বাচনের সময়ে। তিনি বলেন, আমি কথাটা বলছি যে, এর কারণ আছে। কারণ হচ্ছে, আমরা দেখছি যে, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছেন না।

ফখরুল বলেন, আমি অনুরোধ করবআমি প্রত্যাশা করবআমি আশা করি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সেই নিরপেক্ষতা পালন করবেন এবং দেশে যে সংকট আছে সেই সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করবার জন্য তারা কাজ করবেন। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। অন্যদিকে ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষ করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। এ নিয়ে অনেক দিন ধরে বিএনপি নেতারা কথা বলছেন।

দ্রুত নির্বাচন নইলে অন্যান্য শক্তির উত্থান হতে পারে : নির্বাচন নিয়ে কথা বললে তার সমালোচনা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কেন বলি, এই কথাটা আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা ১৫ বছর বঞ্চিত এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তারা তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবার একটা সুযোগ পাবে। এ বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি টেনে তিনি বলেন, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। তখন জনগণের যে চাহিদা সেই চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরিভাবেই বঞ্চিত হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ কথাটা বার বার বলতে চাই, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেটার জন্য আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। আমি সেই কারণে বলেছি যে, বর্তমান যে অন্তবর্তীকালীন সরকার আছেন সেই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। ছাত্র অভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থায় কিন্তু আমরা সেই ধরনের একটা ব্যবস্থা দেখে এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না যে, দেশের মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।

নির্বাচনের জন্য কত অপেক্ষা?: মির্জা ফখরুল মনে করেন, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে এগুতে চায়। তবে নির্বাচন হওয়া যে দরকার সে বিষয়ে সবাই একমত। এ নির্বাচনটা শুধু একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, নির্বাচনটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য একটা পথ সৃষ্টি করা, একটা দরজা খোলা। সংস্কারগুলো সব করার পর নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাহলে কি আমরা ৪/৫ বছর ধরে অপেক্ষা করব বা যতদিন সংস্কার সম্পন্ন না হয় ততদিন ধরে অপেক্ষা করবে জনগণতারা তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা এখনো দেখছি, আমাদের আমলাতন্ত্র আগের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থায় এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সমস্ত প্রশাসনে তারা একইভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কোনো রদবদল হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুলকলেজগুলোতে সেই ধরনের লেখাপড়া হয় না, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এটা অতীত থেকেই এসেছে। সেটা পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়, কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনগুলো চাই। সেই কারণে নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন দ্রুত হলে যে দল ক্ষমতায় আসবে তার যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট টু পিপলস থাকবে, সেই কমিটমেন্টগুলো পালন করার জন্য অবশ্যই তারা দায়বদ্ধ থাকবে।

নূন্যতম বিষয়ে ঐক্যমত জরুরি : উনসত্তরে আসাদ, চব্বিশে আবু সাইদ, একাত্তর ও তার আগ থেকে অসংখ্য মানুষের জীবনদানের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সেই জীবনদানকে অর্থবহ করতে হলে প্রয়োজন নূন্যতম বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমরা যারা এক সাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করছিলাম, আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। এখন যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্ধন করতে হয় সেটাও সামনে আসতে পারে, ওটাকে সামনে রেখেই আমাদের এগুতে হবে।

আমি মনে করি, আমাদের এই ন্যূনতম যে সংস্কার হচ্ছে নির্বাচন কেন্দ্রিক সেই সংস্কার শেষ করে আমাদের অতি দ্রুত নির্বাচনের পথে যাওয়া উচিত এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার বেরিয়ে আসবে তাদের দায়িত্ব হবে এখানে পুরোপুরিভাবে সেই সংস্কারের কমিটমেন্টগুলো বাস্তবায়িত করা, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ আসাদ পরিষদের আসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তার এই আত্মত্যাগ তখনকার পাকিস্তানি স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে। পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খানের।

সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় সেখানে বক্তব্য রাখেনবিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিজাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহীদ আসাদের ছোট ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি মহাসচিবের কথায় আরেকটা এক এগারো’র ইঙ্গিত : নাহিদ
পরবর্তী নিবন্ধঅলি খাঁ মসজিদ গোল চত্বরে ইসলামিক মন্যুমেন্ট উদ্বোধন