অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে

জলাবদ্ধতা নিরসন

| শুক্রবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

মাত্র কয়েকদিন আগে আমরা সম্পাদকীয়তে লিখেছিলাম, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখগাথা হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী কিংবা অল্প বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, এই নিয়তি একপ্রকার মেনে নিয়েছে নগরবাসী। এমনকি বৃষ্টি না থাকলেও অনেক সময় জোয়ারের পানিতেও ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার, হাসপাতালসহ বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ার ঘটনা এখানে নৈমিত্তিক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সময় জলপ্রবাহের যে রাস্তা ছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সে কারণেই জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে। এর বাইরে এলাকা ভিত্তিকও নানা কারণ থাকতে পারে। জলাবদ্ধতার পেছনে পাহাড় কাটা, কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, খাল নালা দখল হওয়াসহ নানা কারণ আছে।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১০ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় এই নির্দেশনা দেন ড. ইউনূস। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বর্ষাকালে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা একটি নৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নগরীর এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের এ সভায় নগরীর যানজট সমস্যা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, যার প্রেক্ষিতে আগামী দিনে যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে।

এদিকে, সুসংবাদ হলো চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে আগামী ১৯ জানুয়ারি নগরে বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা। চার উপদেষ্টাকে নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার পুরোপুরি সমাধানের পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ তথ্য জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। চার উপদেষ্টা হচ্ছেন শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎজ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষযক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এর মধ্যে তিনজন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে গত ৫ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক একটি সভাও হয়। সভায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির লক্ষ্যে ১৮ জানুয়ারি জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাস্তব অবস্থা জানতে বিভিন্ন খাল ও ড্রেন সরেজমিনে পরিদর্শন এবং ১৯ জানুয়ারি সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়। একই বৈঠকে আগামী বর্ষার আগে শহরের সব খাল ও ড্রেন পরিষ্কার, স্লুইসগেটের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং করা, সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ দেওয়া হয়।

অল্প কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রয়াত উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফও চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে চলমান চারটি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্টদের ‘প্রাতিষ্ঠানিক ইগো’ দূর করে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেছেন, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এমনকি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নদীতে ৬ থেকে ৭ মিটার পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক ইত্যাদি দিয়ে জমাট বেঁধে গেছে। এসব বর্জ্য তো সিটি কর্পোরেশন ফেলে নাই। আমি, তুমি বা আমরা ফেলেছি। এই জায়গায় জনগণকে সচেতন করতে হবে, যেন বর্জ্যের প্রপারলি ম্যানেজমেন্টের মধ্যে তারাও অংশীদার হয়।

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্ষা এলেই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হয়, এটা পুরনো কীর্তন। তবে এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান খুঁজতে চার উপদেষ্টাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, সিডিএর ৩৬টি খালের যে প্রকল্প ছিল, সেটি বাড়ানো হচ্ছে। সামনের প্রকল্পে ৫৭টি খাল আওতাভুক্ত হবে। এতদিন আশা ছিল, জলাবদ্ধতার যে সমস্যা সেটির ৬০ শতাংশ কাজ হলে সমাধান পাব। এবার যেহেতু ৫৭টি খাল হচ্ছে সেই হিসেবে জলাবদ্ধতার সমস্যার ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ সমাধান পাব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, যে ২১টি খাল বাদ আছে, এসবের কারণে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না। শেষ পর্যন্ত সেই বার্তা প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাই সকল উপদেষ্টাকে ডেকে, বিশেষভাবে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যেখানে শুধু জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্যই ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে একটি বিশেষ মিটিং হবে।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা যে আলোচনায় বসবেন, সেটা ফলপ্রসূ হোকসেটাই প্রত্যাশা করি আমরা। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকাই জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে