বিপিএল শেষে যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছিল তখনই জানানো ছিল ৮ এবং ৯ ফেব্রুয়ারী কোন মিডিয়া কার্যক্রম থাকবে না। মাঠের অনুশীলনেও তাই দেখা গেল। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরের লম্বা দেয়ালের ওপর দেওয়া হয়েছে আরও কয়েক ফুট কালো পর্দা। ফাঁকা রাখা হয়েছে কয়েক হাত জায়গা। যেখান দিয়ে ক্রিকেটারদের হাঁটাচলা আংশিক দেখা ছাড়া আর কিছুই বোঝার উপায় নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে রুদ্ধদ্বার ঘোষণা না হলেও শনিবার থেকে এই ব্যবস্থায়ই চলছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প। প্রথম দুই দিন অবশ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে থাকা সবাই যোগ দেননি অনুশীলনে। শনিবার ক্যাম্পে যোগ দেন তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান, জাকের আলি, মুস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার। প্রথম চার জন্য অবশ্য বিপিএলের প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়ার পর থেকেই নিজ উদ্যোগে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্প শুরুর দিন ক্রিকেটারের চেয়ে কোচের উপস্থিতিই ছিল বেশি। প্রধান কোচ ফিল সিমন্স, সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ফাস্ট বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস, স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদের সঙ্গে পাঁচ দিনের এই ক্যাম্পের জন্য ডেকে নেওয়া হয়েছে স্থানীয় দুই কোচ সোহেল ইসলাম ও তালহা জুবায়েরকে।
ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিন গতকাল রোববার যোগ দেন তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও নাসুম আহমেদ। এদিন আরেক স্থানীয় কোচ আশিকুর রহমানকেও দেখা গেছে দলের সঙ্গে। বিপিএল ফাইনাল খেলা ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংসের ছয় জন নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়, রিশাদ হোসেন ও পারভেজ হোসেনকে দেওয়া হয়েছে দুই দিনের ছুটি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলা খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও পেয়েছেন ছুটি। বরিশালের ক্রিকেটাররা গতকাল রোববার বিপিএল ট্রফি নিয়ে গেছেন বরিশালে। তারা সবাই আজ সোমবার যোগ দেবেন প্রস্তুতি ক্যাম্পে। দেশ ছাড়ার আগে পুরো দলের সবাই মিলে তিন দিন অনুশীলন করবেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে বৃহস্পতিবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হবেন শান্ত–মিরাজরা। পরে দুবাইয়ে কিছু দিন প্রস্তুতি নিয়ে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। বাকি দুই ম্যাচ খেলতে পাকিস্তানে চলে যাবে বাংলাদেশ। প্রায় দেড় মাস ধরে বিপিএল। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সবশেষে টি–টোয়েন্টি খেলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে এখন তাই ওয়ানডে সংস্করণে মনোযোগ ফেরানোর চ্যালেঞ্জ তাদের। দুটিই সাদা বলের খেলা হওয়ায় কিছুটা হলেও অবশ্য সহজ হবে তাদের কাজ। তবে দলের জন্য দুর্ভাবনার কারণ হতে পারে শান্তর ফর্মহীনতা ও ম্যাচ অনুশীলনের ঘাটতি। পুরো বিপিএলে বরিশালের হয়ে পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলা হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়কের। সবশেষটি ছিল সেই ১৬ জানুয়ারি। দলের পক্ষ থেকে কম্বিনেশনের কথা বলা হয়েছে, তবে পারফরম্যান্সও ছিল না শান্তর পক্ষে। সুযোগ পাওয়া পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি শান্ত। সব মিলিয়ে করেন মাত্র ৫৬ রান। পরে শেষ দিকের ম্যাচগুলো বেঞ্চে বসে কাটান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ইনজুরির কারণে ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ছিলেন না অধিনায়ক। ম্যাচ অনুশীলনের বড় একটা ঘাটতি তাই থাকছেই তার। ওয়ানডেতে অবশ্য সবশেষ সিরিজগুলোয় ভালো ফর্মে ছিলেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে করেন ১২৩ রান। নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও তিনি পান রানের দেখা। তাছাড়া বিপিএলে ছিল ভিন্ন আবহ ও ভিন্ন মেজাজের টি–টোয়েন্টি সংস্করণের খেলা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরবে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের টুর্নামেন্টের সবশেষ আসরে সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। আট বছর পর নতুন আসরে সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি অথবা তার চেয়েও বেশি কিছুর আশা থাকবে সবারই। সেই অভিযানে প্রস্তুতি পর্বে নিজেদের সব ঘাটতি শুধরে নেওয়ার চেষ্টাই করবেন ক্রিকেটাররা।