অনুদান নির্ভর বাজেটে উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ

চসিকের দুই হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য দুই হাজার ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে ২৩টি খাতে নগর উন্নয়নে সর্বোচ্চ ৮৮২ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ৩৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এটি ছিল চসিকের বর্তমান (ষষ্ঠ) পর্ষদের মেয়র হিসেবে তাঁর প্রথম বাজেট ঘোষণা। এ সময় মেয়র বলেন, নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যাশা ও নগরীকে পরিবেশগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করার স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করলাম। এদিকে নির্বাচনী ইশতেহার ও সভা-সমাবেশ এমনকি বাজেট বক্তব্যেও সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করার কথা বলেন মেয়র। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ছিল না। কারণ বাজেটে সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে অনুদান ও ত্রাণ সাহায্য খাতে। এর মধ্যে এক হাজার ৫৭০ কোটি টাকা উন্নয়ন অনুদান এবং চার কোটি টাকা ত্রাণ সাহায্য খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উন্নয়ন অনুদান খাতে ৫২৯ কোটি ৩২ লাখ ৫০ টাকা এবং এক কোটি টাকা ত্রাণ সাহায্য খাতে আয় হয়েছিল। গতকাল বাজেট অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সংশোধিত এক হাজার এক কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেটও ঘোষণা করেন মেয়র। এ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল দুই হাজার ৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট বাস্তবায়নের হার ৪১ শতাংশ।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন চসিকের অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ।
ব্যয় খাত সমূহ : প্রস্তাবিত বাজেটের ৩৩ শতাংশ ব্যয় হবে বকেয়া দেনা পরিশোধে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে বকেয়া পরিশোধ করা হবে ৪১২ কোটি টাকা।
এছাড়া কর্পোরেশনের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে মোট বরাদ্দের ২৪ শতাংশ ব্যয় করা হবে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৬০১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক ২৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি খাতে সাড়ে ৫২ কোটি টাকা, কল্যাণমূলক ব্যয় ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, আতিথেয়তা ও উৎসব খাতে ছয় কোটি পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মশক নিধন খাতে ব্যয় পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে ওষুধ ক্রয়ে তিন কোটি টাকা এবং ফগার ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিন কেনায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মশক নিধন খাতে ব্যয় হয় এক কোটি ১৫ লাখ টাকা।
আয় খাত : প্রস্তাবিত বাজেটে নিজস্ব উৎস থেকে ৮৫২ কোটি এক লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে হাল ও বকেয়া পৌরকরসহ তিন ধরনের কর থেকে ৫৩৩ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় ধরা হয়। পৌরকরের মধ্যে হাল গৃহকর, আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্ন রেইট খাতে ২১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা, বকেয়া গৃহকর, আলোকায়ন ও পরিচ্ছন্ন রেইট খাতে ১৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং অন্যান্য কর বাবদ ১৩২ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় ধরা হয়েছে।
এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর, স্বাস্থ্য রেজিস্ট্রেশন ও জন্ম-মৃত্যু, পেশা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞাপন-সাইনবোর্ড, যানবাহন কর, সিনেমা ও প্রমোদকর খাতে ১৩২ কোটি আড়াই লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে ৪৩ কোটি টাকা, হাল কর ও অভিকর খাতে ১০৮ কোটি টাকা এবং নিজস্ব সম্পত্তি হস্তান্তরসহ অন্যান্য কর খাতে ৮৯ কোটি পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল।
এছাড়া রাস্তা খননসহ বিভিন্ন ফিস থেকে ১২৪ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জরিমানা খাতে ৫০ লাখ টাকা, ব্যাংক স্থিতি থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সম্পদ থেকে অর্জিত ভাড়াসহ আয় ধরা হয় ১১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অন্যান্য উৎস থেকেও ৩৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমগবাজারে বিকট বিস্ফোরণ ভবন ধসে নিহত ৭
পরবর্তী নিবন্ধদেশে রেকর্ড ১১৯ মৃত্যু