হালদা নদীর কার্প জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে না নদী পাড়ের মৎস্যজীবীদের। গত দুই জো’তে আশানুরূপ ডিম না পাওয়া মৎস্যজীবীরা জাল নৌকা নিয়ে নদী পাড়ে অপেক্ষা করতে চান আগামী ১৯–২৫ জুন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে মা মাছ ডিম না দিলে এ বছরের মত নৌকা–জাল গুটিয়ে হতাশ মনে ফিরতে হবে বাড়ি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী পূর্ণিমা ও আমশ্যার দুটি জো রয়েছে। এ সময় মা মাছ পুরোদমে ডিম না দিলে এই মৌসুমে আর ডিম পাওয়ার সম্ভবনা নেই। এই নদীর মাছের ডিমের উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা মনে করেন, এক সময়ে জীববৈচিত্র্যের ভরপুর হালদাকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মা মাছ নিধন ও পানি দূষণ থেকে এই নদীকে রক্ষায় যাদের উপর দায়িত্ব রয়েছে তারা বরাবরেই ছিল উদাসীন। বিভিন্ন সময় হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে প্রকল্প–কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এতে কোনো সুফল দেখেনি হালদা পাড়ের মানুষ। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর মা মাছ চোরদের তৎপরতা বন্ধে প্রশাসনের ব্যর্থতায় আজ নদীতে মা মাছের সংখ্যা কমেছে। নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যর্থতায় বছরের পর বছর নদীতে গড়িয়ে আসছে শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যসহ নানা ধরনের বর্জ্য।
মৎস্যজীবীদের এমন অভিযোগ যৌক্তিক বলে মনে করছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা। তারাও মনে করেন হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই পর্যন্ত নেয়া কোনো প্রকল্প সুফল দেয়নি। মাছ চোরদের উৎপাত ও নদীর পানি দূষণের কারণে এই নদীতে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। মুক্ত পরিবেশ না থাকায় বাইর থেকে মাছ এই নদীতে প্রবেশ করছে না।
হালদা বিশেষজ্ঞ ড. শফিকুল ইসলামের মতে হালদার পানিতে প্রতিনয়ত দূষিত বর্জ্য এসে পড়ার কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে রয়েছে। তাছাড়া নদীর অনেক স্পটে চুরি করে জাল পাতার খবরও বিভিন্ন সময় পাওয়া যাচ্ছে। দূষণ ও মাছ চোরদের উৎপাত নদীর কার্প জাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত করছে। হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে আগে বর্জ্যের উৎস খুঁজে বের করে নদীর পানিকে দূষণমুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছ চোরদের উৎপাত বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কারা নদীতে যারা চুরি করে জাল পাতে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারলেই এই নদী মাছের জন্য নিরাপদ হতে পারে।
জানা যায়, হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের লালা চন্দ্র বিল, চিকনদন্ডী ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশনের পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বিল–ঝিল, নদীর দুই তীরে থাকা শত শত একর জলাবদ্ধ জমির পঁচা ঘাস, নদী ও সংযুক্ত কাটখালী খাল, খন্দকিয়া ও কুয়াইশ খাল, মগদাই, কাগতিয়া, বজ্যাখালী খালের পাড়ে থাকা মুরগির খামার, ডেইরি ফার্মের বর্জ্য জোয়ার ভাটার পানিতে মিশে নদীর পানিকে দূষিত করছে।
হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হালদার দূষণের বিষয়টি গত কয়েক বছর থেকে সংশ্লিষ্ট অংশিজনদের জানিয়ে বর্জ্যের উৎস বন্ধের উপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন তিনি। কিন্তু যাদের ওপর নদীকে দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব, তাদের নীরবতা ভাঙাতে না পারায় দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি বলেন, এই নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারিভাবে পরিকল্পনা মহাপরিকল্পনার কথা শোনা যায়। তবে এসব কর্মসূচিতে এই পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২০ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এই নদীটির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ও মানিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি উপজেলাসহ নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন ২৩ হাজার ৪২২ একর এলাকা জুড়ে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়।