‘হাত বাড়ালেই স্পর্শ করতে পারব সেরকম কিছু একটা যখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় তখন অনেক দুঃখ হয়, অনেক কষ্ট হয়।’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের উপর্যুক্ত কথার অনুসরণে বলতে চাই-আমাদের দেশে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ। আমরা সেসব সম্পদ কাজে লাগাতে পারি উপযুক্ত শিক্ষা, মেধা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে। একটি জাতি তখনই জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিতে উত্তরোত্তর সাফল্যের মুখ দেখবে, যখন সে দেশটি মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উপযুক্তভাবে মজবুত করতে সক্ষম হবে। অর্থনৈতিক মানদণ্ডের ওপর শিক্ষা নয় বরং শিক্ষার ওপরই অর্থনৈতিক মানদণ্ড নির্ভরশীল। একটা সময় দক্ষিণ কোরিয়া ছিল বিশ্বের অন্যতম গরিব দেশগুলোর মধ্যে একটি। সেই দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের চাকার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষাকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আজ এশিয়ায় নিজের অবস্থান ঈর্ষনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের সাথেই জাফর ইকবাল স্যারের যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি, কারণ তিনি জানেন বাংলাদেশের মানুষকে একটু এগিয়ে দেবার পথ বাতলে দিলে তারা জয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনতে ঝাপিয়ে পড়ে পূর্ণ উদ্যমে। জাফর ইকবাল স্যার সেজন্য ‘প্রশংসা’ শব্দটি নিয়ে বারবার ইঙ্গিত প্রদর্শন করেছেন। সত্যিই তো, আমরা কতজন জানি যে, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট তৈরি করে রপ্তানি করছে। আমার সৌভাগ্য যে আমি এটি জানতে পেরেছি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের নিকট হতে। আর ওনার দুর্ভাগ্য তাঁকে এ বিষয়ে জানতে হলো ভারতীয় সাংবাদিকদের মুখ থেকে।
আমার কাছে ‘প্রশংসা’ একটি বিশাল এবং গভীর বিশ্লেষণধর্মী শব্দ বলে মনে হয়। আর এই মনে হওয়াটাও তৈরি হয়েছে ৩০ অক্টোবর ২০২০, বিডিনিউজে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখাটি পড়ে। আসলে প্রশংসা করতে না পারা লোকের অভাব যে কারণে হচ্ছে তা হল: মানুষের হিংসা, অহংকার আর ভালো কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দেবার মানসিকতার অভাবে। অথচ একটু প্রশংসা একটি মানুষকে এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে যে, হয়তো তার ধারণাই ছিলো না যে, নিজের লুকায়িত মেধা সম্পর্কে। যা একটুখানি প্রশংসাবাণীর দরুণ নিজেকেই বিস্মিতভাবে আবিষ্কার করতে পারছে।
কে বলতে পারে এই প্রশংসার গুণেই হয়তো বের হয়ে আসবে এক একটি নক্ষত্রসম মানব। যে মানবজাতিই রাষ্ট্র তথা দেশকে দুর্নীতির শেকল মুক্ত করে মেধাবী শিক্ষিত জাতির সমাগমে ভরপুর করে তুলবে। তাই জাফর ইকবাল স্যার প্রশংসা চর্চা পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অর্থাৎ শিশু হতেই শুরু করার কথা উল্লেখ করেছেন। আমি তাঁর কথাকে সম্মান জানিয়েই বলতে চাই- তারও আগে সরকারের ক্ষমতাসীন মহল হতে, সমাজের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিকট হতে প্রশংসা করার চর্চা শুরু হউক সর্বাগ্রে। সুযোগ্য নবাগতদের জায়গা করে দেবার মনমানসিকতা বেশিরভাগ মহলেরই নেই বললেই চলে। মানুষ হিসেবে এটুকু মাথায় এবং মনের ভেতর রাখা উচিত যে এই বিশ্বব্রক্ষাণ্ডে আমিতো চিরস্থায়ী নই। যুগযুগ ধরে নানান বিষয়ের উপর সংগ্রাম হয়ে আসছে, হতে থাকবে। ঠিক একইভাবে জাফর ইকবাল স্যারের মূলবক্তব্য ‘অভ্যন্তরীণ প্রশংসা’ এই প্রশংসা নিয়েই শুরু হউক নতুন সংগ্রাম। খুলে যাক একের পর এক অনাগত দিগন্তের উজ্জ্বল রেখাপথ।