অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে যে পথে গেল ওরা

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই সন্তান মঈনউদ্দিন ফয়সাল (১৯) ও রাশেদুল ইসলাম (২২)। তারা চট্টগ্রামের স্বনামধন্য একটি কলেজের শিক্ষার্থী। ফয়সাল ওই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। রাশেদুল পড়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে। গত শুক্রবার রাতে খুলশী থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে মোবাইল চুরির অপরাধে।

মূলত, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত তারা। সর্বস্বান্ত হলেও এ নেশা থেকে বের হতে পারেনি কিছুতেই। তাই নামীদামি কমিউনিটি সেন্টারে তারা যায়, খাওয়ার পাশাপাশি মোবাইল চুরি করে নগরীর স্টেশন রোড এলাকায় নির্দিষ্ট এক বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয়। যে টাকা পায়, তা ভাগাভাগি করে নিয়ে আবারও অনলাইন জুয়া খেলতে বসে যায় দুজনই।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্তদের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। মূলত এতে আসক্ত ভুক্তভোগীরা দিনদিন অপরাধপ্রবণ হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন সমাজে অপরাধ বাড়ছে, অন্যদিকে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃত দুজন গতকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানান ওসি খুলশী।

গ্রেপ্তারকৃত ফয়সাল ও রাশেদুল জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, কলেজেই দুজনের পরিচয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বন্ধুদের মাধ্যমে তারা জড়িয়ে পড়েন ‘ওয়ানএঙ বেট’ নামে একটি অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্মে। প্রথমে জমানো টাকায় নগদ/বিকাশের মাধ্যমে ছোট অংকের টাকা রিচার্জ করে মোবাইলে জুয়ার অ্যাপসে একাউন্ট খুলে টাকা বিনিয়োগ করা শুরু করে। শুরুর দিকে বেশ লাভ পায়। এক পর্যায়ে শুধুই লস হতে থাকে। লস দিতে দিতে একসময় নিঃস্ব হয়ে যায় তারা।

জুয়ার ফাঁদে পড়ে বিনিয়োগের নেশায় দুই ছাত্র প্রতারণা ও চুরিতে নেমে পড়ে। শহরের নামকরা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত খাওয়ার সুবাদে মোবাইল চুরি শুরু করে। চুরির ধরনটাও ছিল বেশ অভিনব! তারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যেত বরযাত্রী বা কনে যাত্রী বেশে। স্টেজের পাশেই ঘুরঘুর করতো দুজন। লোকজন ছবি তুলতে আসত। অনেকে নিজের মোবাইল ফোনটি দিয়ে ছবি তুলে দিতে বলতো। একজন ছবি তুলত। অন্যজন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করত। মোবাইল ফোনের মালিক যখন ব্যস্ত হয়ে পড়তো তখন একজন অন্যজনকে সটকে পড়ার সিগন্যাল দিত। সম্প্রতি তারা নেভী কনভেনশন হল থেকে তিনটি মোবাইল চুরি করেছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে দুইটা আইফোন ১৪ প্রো ম্যাঙ এবং একটি আইফোন ১৪। মোবাইল ফোনগুলো তারা বিক্রি করতো স্টেশন রোডের ফুটপাতে কাচের বাঙ নিয়ে মোবাইল বিক্রেতা সোহেলের কাছে। সে প্রতিটি মোবাইলের জন্য ৩০/৩৫ হাজার টাকা করে দেয়। এ টাকা তারা দুজনে ভাগাভাগি করে নিয়ে অনলাইনে জুয়ার নেশায় ব্যয় করতো। তবে আসামিদের উপলব্ধি অনলাইন জুয়ার ফাঁদ তাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছে এবং কেউ যাতে এই ফাঁদে পা না দেয় সে বিষয়ে তারা ভবিষ্যতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

ওসি খুলশী সন্তোষ চাকমা জানিয়েছেন, এ দুজনের মতো এভাবে শত টাকা থেকে হাজার টাকা, হাজার টাকা থেকে লক্ষ টাকা জুয়ায় বিনিয়োগ হয়ে যায়। জুয়ার ফাঁদ থেকে আর কেউ বের হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে ‘প্রবাসী, ব্যাংক ও বীমা কর্মী’
পরবর্তী নিবন্ধএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলবে অক্টোবরে