অনলাইনে চলছে কেনাকাটার ধুম। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীরা। অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে চোরাই মোবাইলসহ বিভিন্ন চোরাই ও নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলে বা গ্রুপ তৈরি করেও চোরাই স্মার্টফোন বা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে। তবে বেশি অভিযোগ ক্লাসিফায়েড (শ্রেণিভিত্তিক) মার্কেট প্লেসগুলোর বিরুদ্ধে। এসব মার্কেট প্লেসে রীতিমতো বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয়। পাশাপাশি অনলাইনে মাদকের কারবারিরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে এসব মার্কেট প্লেসে বিক্রি হওয়া চোরাই মোবাইল ফোনসহ চুরি যাওয়া অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা ছাড়াও গ্রেপ্তার করেছেন অনলাইনে মাদকের ব্যবসা করা কয়েকজন ব্যবসায়ীকে।
অনলাইনে চোরাই মোবাইল বিক্রির সময় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুজনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তামাকুমন্ডি লেইন সংলগ্ন মক্কা টাওয়ারের তৃতীয় তলার সামনে থেকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি চোরাই মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মামুনুর রশিদ আরাফাত ও মুন্নার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, মার্কেট প্লেস রয়েছে দুই ধরনের। একটি ই-কমার্সভিত্তিক অনলাইন মার্কেট প্লেস। অন্যটি ক্লাসিফায়েড মার্কেট প্লেস। ক্লাসিফায়েড মার্কেট প্লেসের বিরুদ্ধেই যত অভিযোগ। এই মার্কেট প্লেসে সরাসরি বিনামূল্যে ও টাকার বিনিময়ে স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা যায়। যদিও ক্লাসিফায়েড মার্কেট প্লেস কর্তৃপক্ষ সেই বিজ্ঞাপন অনুমোদন দিলেই তা প্রকাশ হয়। চোরাকারবারিরা এই সুযোগই নেয়।
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেইজ, গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডি খুলে অনলাইনে চলছে ইয়াবার ব্যবসা। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমেও বেচাকেনা হচ্ছে মাদক। অনলাইনে মাদকের অর্ডার করলেই নিদিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে হোম ডেলিভারি। হোম ডেলিভারিতে নিজস্ব ডেলিভারিম্যানের পাশাপাশি প্রচলিত ডেলিভারি সার্ভিস এবং কুরিয়ার ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান টেকনাফ হয়ে পণ্যবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি সেবার গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। অনলাইন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে বড় বড় চালান মাঝারি কারবারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যাচ্ছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ইলেকট্রনিঙ পণ্যের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তৌহিদ এন্টারপ্রাইজ নামে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল করিম ইলেক্ট্রনিঙ পণ্য ব্যবসার আড়ালে চালিয়ে আসছিলেন ইয়াবার ব্যবসা। গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশকে জানান, চট্টগ্রামে বসে তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় ইয়াবা সরবরাহ করেন। খুচরা বিক্রেতা ও বাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে। সরাসরি মোবাইলে কারও সাথে যোগাযোগ কিংবা কথা বলতেন না তিনি।
কোতোয়ালী থানার ওসি বলেন, ৩৫০ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ২৬ হাজার ৩০০ টাকাসহ আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি। সাথে তার মোবাইলটি জব্দ করলেও সে মোবাইলের পাসওয়ার্ড আমাদের দিতে রাজি হচ্ছিল না। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইলে ঢুকে দেখি বিভিন্নজনের সঙ্গে সে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে। ইয়াবার স্যাম্পলের ভিডিও পাঠিয়েছে। ইয়াবার গন্তব্য, টাকার লেনদেনসহ সকল কিছুই হয় অ্যাপের মাধ্যমে। পুলিশকে এড়াতে সে সরাসরি মোবাইলে কোনো যোগাযোগ কিংবা কথা বলে না। একই কায়দায় ব্যবসা করে তার ভাই আব্দুল খালেকও। বর্তমানে ইয়াবার মামলায় সে জেলে আছে।
একইভাবে ৫ মার্চ আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে। তারা উল্লেখিত কায়দায় ইয়াবার ব্যবসা করে।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ভাইবারসহ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তারা ইয়াবা কেনাবেচা করত। অনলাইনে মাদকের পেজও আছে। অনলাইনে মাদক বিক্রির পেজে কমেন্ট কিংবা লাইক করলে বিক্রেতারা ইনবঙে এসএমএস দেয়। এরপর চাহিদার পরিমাণের ওপর দাম নির্ধারণ করে। দাম ঠিক হলে তারা নির্দিষ্ট স্থানে মাদক পৌঁছে দেয়।