শরীরের মেরুদণ্ড ভাঙা। কোমরের নিচের অংশ অবশ। দুটি হাত ও মনের জোরে হুইলচেয়ারে বসে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্রদীপ কুমার দাশ (৪৯)। ২৩ বছর বয়সে পা হারান, তারপরও অন্যের ওপর নির্ভরশীল হননি। বাঁশ–বেতের তৈরি নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী পণ্যের ব্যবসা করে চালান সংসার। তার কথায়, নিজের আয়ের ডালভাতেও অনেক স্বাদ।
সীতাকুণ্ড থানা কার্যালয়ের সামনেই পুরাতন ভূমি কার্যালয়ের দেয়ালঘেঁষে তার বাঁশ–বেতের তৈরি গৃহস্থালী ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত পণ্যের দোকান। থরে থরে সাজানো রয়েছে বাঁশের তৈরি খাঁচা, কুলা, ঝুঁড়ি, বেড়া ইত্যাদি। প্রদীপ বলেন, একেক দিনে একেক রকম বেচাকেনা হয়। তবে মাস শেষে গড়ে ১০ হাজারের কিছুটা বেশি আয় হয়। তা দিয়ে চলে যায়।
তিনি জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি পড়াশোনা হয়নি প্রদীপের। ঝালাইয়ে কাজ শিখে শুরু করেন জীবনসংগ্রাম। পরে কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের অধীনে। ১৯৯৭ সালে টিএসপি সার কারখানার একটি গুদাম নির্মাণের কাজ করার সময় ওপর থেকে নিচে পড়ে যান। ঢাকায় তিন মাস চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন। টাকার অভাবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয়নি। দুই বছর ভালো ছিলেন। পরে তার কোমর থেকে নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়। স্থানীয়দের কাছে তার দোকানটি হুইলচেয়ার প্রদীপের দোকান নামে পরিচিত। দাম সহনীয় পর্যায়ে রেখে ভালো জিনিস বিক্রি করায় মানুষও তার ওপর ভরসা করেন। অনেকে ফোন করে জিনিসের ফরমাশ করেন কিংবা লোক পাঠিয়ে দেন। স্থানীয় কারিগরদের থেকে কিনে নিয়ে তিনি বিক্রি করেন। মোট ১০টি কারিগর পরিবার জিনিসপত্র তৈরি করে তাঁর কাছে বিক্রি করেন। তিনিও কোনো জিনিস লাগলে কারিগরদের কাছে ফোন দেন। অসুবিধা হলো কারিগরদের বাড়ি থেকে দোকান পর্যন্ত জিনিসপত্র আনা। অনেক সময় আনার লোক পাওয়া যায় না।
সীতাকুণ্ড উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা বেগম বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। ইচ্ছা থাকলে কারও মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেই কিছু করে আয় করা যায়।