অচল ডেমু সচল হবে যেভাবে

স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা ডেমু ট্রেনগুলো দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পার্বতীপুর ডিজেল শপে দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল করা একটি ডেমু ট্রেন গত ৯ অক্টোবর চলাচলে যুক্ত হয়, যা রেলপথমন্ত্রী বাণিজ্যিক চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ থেকে জানানো হয়, কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই ওই ট্রেনটি নিয়মিত পার্বতীপুর-রংপুর রুটে চলাচল করছে। ফলে অবশিষ্ট ট্রেনগুলোও একই পদ্ধতিতে মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অচল ডেমুগুলো সচলের বিষয়ে একটি কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। এই ব্যাপারে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে কমিটি। এই কমিটির সুপারিশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এই ব্যাপারে গত ২০ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ডেমু সেটগুলো সচলের ইতিবৃত্ত ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। এ সময় কারিগরি দিক তুলে ধরে দেশীয় সাশ্রয়ী প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তাদের এই পরিকল্পনায় সায় দেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সব ডেমু সচলের নির্দেশ দেন। এ জন্য রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে রিপোর্ট তৈরি পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাব উপস্থাপনের নির্দেশনাও দেন।

উল্লেখ্য, যাত্রী সেবা আরও উন্নত, সহজ এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালে লাল-সবুজের মাঝে সাদা রঙের ২০ সেট ডেমু ট্রেন চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড থেকে আমদানি করা হয়। এই ২০ সেট ডেমু আমদানিতে খরচ হয়েছিল ৬০০ কোটি টাকা। ২০ বছর আয়ুষ্কালের ডেমু পাঁচ বছর না যেতেই একে একে বিকল হতে শুরু করে। গত নয় বছরের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ডেমু ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যন্ত্রাংশ দুষ্প্রাপ্য ও সফ্‌টওয়্যার নির্ভর হওয়ায় চায়না প্রকৌশলী ছাড়া এই ডেমু ট্রেনগুলো আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে মেরামতের কোনো সুযোগ ছিল না। বারবার নষ্ট হলে চায়না থেকে প্রকৌশলী এসে মেরামতের পর ঠিক করা হতো। এক পর্যায়ে এতো ব্যয়বহুল মেরামত ব্যয় মেটাতে না পারায় একে একে পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে পড়ে ট্রেনগুলো। এক পর্যায়ে বুয়েটের প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে একটি অচল ট্রেন রেলওয়ের পার্বতীপুর ডিজেল শপে দেশীয় প্রযুক্তিতে সচল করে পরীক্ষামূলক চলাচলে সফল হয়। বেশ কয়েকবার সফল ট্রায়ালের পর পরিপূর্ণভাবে সফল হওয়ায় আশার আলো সৃষ্টি হয়।

প্রসঙ্গত, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট-ডেমু। দুই দিকে দুটি ইঞ্জিন, মাঝখানে বগি। একেকবার ১৪৯ জন যাত্রী বসে এবং দেড়শ যাত্রী দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে এই ডেমু ট্রেনে। ডেমু ট্রেনগুলো মূলত কম দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের জন্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়া জগদীশ কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধবেপরোয়া যান চলাচলই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ