প্রেম–মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুভূতি, যা সময়, সমাজ ও অবস্থানের গণ্ডি পেরিয়ে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। ‘অকশান’ উপন্যাসে সেই প্রেমই বিভিন্ন মাত্রা ও প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হয়েছে, যেখানে রয়েছে নিষিদ্ধতা, ত্যাগ, প্রতিবন্ধকতা এবং সর্বোপরি আত্মদর্শনের জোরালো এক অন্বেষা। লেখকের ভাষ্যে, প্রেম এখানে কেবল একটি সম্পর্ক নয়, বরং এক গভীর চৈতন্য। এটি শুরু হয় এক বাণিজ্যিক নিলামের পরিপ্রেক্ষিতে– যেখানে কাহিনির সূচনালগ্নেই লেখক প্রেম ও পতিতার অস্তিত্বকে একই ফ্রেমে নিয়ে আসেন, সাহসের সাথে। সমাজে প্রেম ও পতিতাবৃত্তির অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে হলেও, এই উপন্যাসে তাদের মিলনবিন্দুটি মানবিকতার এক উচ্চতম স্তরে গিয়ে পৌঁছায়।
‘অকশান’ মূলত একটি অসম প্রেমের কাহিনি, যেখানে প্রেমিক ও প্রেমিকার সম্পর্ক সমাজের প্রচলিত মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয়। এই সমাজের চোখে যা ‘অযোগ্য’, তাই লেখকের কলমে হয়ে ওঠে ‘অবধারিত’। প্রেম এখানে মুখোমুখি দাঁড়ায় সামাজিক মোড়লিপনা, পারিবারিক শৃঙ্খল এবং মানসিক দ্বন্দ্বের। প্রেমিকা এক বুক গ্লানি নিয়ে স্মৃতির কাঠামোয় নিজেকে আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে, অথচ প্রেমের পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষা তাকে ক্রমাগত নাড়া দেয়। এই গ্রন্থে প্রেমের রূপকল্প শুধু জাগতিক নয়, লেখক একে পারলৌকিক মর্যাদাও দিয়েছেন। প্রেম যেন মৃত্যুর পরেও রয়ে যায়, এক অপার্থিব রূপে। প্রেমিক–প্রেমিকা এখানে এক জ্বলজ্বলে প্রতীক হয়ে ওঠে–যাদের অবস্থান সমাজে অসম হলেও, মননে এবং আত্মবিশ্বাসে তারা চূড়ান্ত পরিপূর্ণ।
একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো– ভাষার প্রয়োগ। লেখক অকপটভাবে স্বীকার করেছেন, কিছু কিছু জায়গায় ব্যবহৃত ভাষা শালীনতার সীমানা অতিক্রম করেছে, তবে তা সময় ও পরিস্থিতির নিরিখে উপযুক্ত এবং বাস্তব। এই সাহসিকতাই উপন্যাসটিকে এক ভিন্নমাত্রার পাঠ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। লেখকের মতে, শালীনতা জোর করে আরোপ করলে বাস্তবতা বিকৃত হয়, আর সেই বিকৃতি প্রেমের সারল্যকেই কালিমালিপ্ত করে। ‘অকশান’ কোনো রূপকথা নয়। এটি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রেমের উদ্ভাস ঘটানো এক চিত্রপট। উপন্যাসের চরিত্রগুলো নিছক কল্পনা নয়, বরং সমাজের নানা স্তর থেকে উঠে আসা মানুষ, যারা প্রতিনিয়ত প্রেম ও প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বে জর্জরিত। এই উপন্যাসে প্রেম যেমন অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তেমনি তা আত্মপরিচয়েরও উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। লেখকের কলমে প্রেম শুধু অনুভব নয়, এক দর্শন –যেখানে ব্যর্থতা, বেদনা, এবং প্রতিবন্ধকতা মিলিয়ে জন্ম নেয় এক অনির্বচনীয় পূর্ণতা। ‘অকশান’ শুধুমাত্র একটি উপন্যাস নয়, বরং সমাজ ও প্রেমের বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। পাঠকের জন্য এটি একটি সাহসী, বাস্তব এবং দার্শনিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। এটি প্রকাশ করেছে মুদ্রণশিল্প।
লেখক : প্রকাশক
