৬ বছর পর মৃত্যুদণ্ডের আসামি গ্রেপ্তার

নিজের মেয়ে হত্যা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

নিজের মেয়েকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আলাল ওরফে দুদুকে ছয় বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য জানায় র‌্যাব-৭। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর খুলশী থানাধীন পশ্চিম খুলশী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আলাল রংপুর জেলার কোতোয়ালী থানাধীন কিশামত গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিন ওরফে প্লান্টুর ছেলে।
র‌্যাব জানায়, আসামি মো. আলাল এবং তার স্ত্রী চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। সেই সুবাদে নগরীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। এ দম্পতির ২২ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান ছিল। তবে ভিকটিম শিশু কন্যা তার নানীর কাছে রংপুর থাকতো। ২০১৬ সালে কোরবানি ঈদের সময় আলাল তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি রংপুরে বেড়াতে যায়। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে আলাল তার মেয়েকে নিয়ে তাদের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে। কথা মতো মেয়েকে নিয়ে বেড়াতেও যায়। তবে তারা বিকেলে ফেরার কথা থাকলেও মেয়েকে নিয়ে আলাল আর ঘরে আসেনি। এ দিকে দেরি হওয়ার কারণে ওই শিশুর নানী আলাল কল দিলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে আসবে বলে জানায়। নাতনির সঙ্গেও কথা বলেন নানী। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলেও তারা আর ফিরে আসেনি। পরে ওই শিশুর মামা মোবাইলে কল করলে আলাল ফোন রিসিভ করে উল্টো-পাল্টা কথা বলতে থাকে।
অকথ্য ভাষা শুনে ওই শিশুর নানী এবং মামা আলালের বাড়িতে যায়। সেখানে আলালকে খুঁজে না পেয়ে তার মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করলে তারা কিছুই জানে না বলে জানায়। এ সময় আলালের বড় ভাই দুলালও তাকে কল দিয়ে তার অবস্থান জানতে চাইলে সে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে দুলাল চলন্ত বাসের শব্দ শুনতে পায়।
ঘটনার দুইদিন পর অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে রংপুর জেলার কোতোয়ালী থানাধীন তাজহাট এলাকায় একটি কলা বাগানে একটি শিশু কন্যার লাশ পাওয়া যায়। ওই খবর পেয়ে শিশুটির মা, নানী এবং আত্মীয়রা এসে লাশ শনাক্ত করে। তারা নিশ্চিত হন যে লাশটি তাদের ২২ মাস বয়সী শিশু কন্যার। লাশ উদ্ধারের সময় ওই শিশুর গলায় একটি দাগ এবং নাক-কান দিয়ে রক্ত বের হওয়ার দাগ ছিল।
র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, এ ঘটনায় শিশুটির নানী বাদী হয়ে রংপুরের কোতোয়ালী থানায় মো. আলাল এবং অজ্ঞাত আরও ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই সময় থেকে বাবার হাতে সন্তান হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ওই বছরের ২৬ অক্টোবর আসামি আলালকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে রংপুর থানা পুলিশ। এ সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় আলাল; জানায় সে নিজ হাতে তার শিশু কন্যাকে হত্যা করেছে। শিশু কন্যাকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে আসামি আলালকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিচার চলাকালীন সে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়। জামিন পেয়ে সে এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম এসে আত্মগোপন করে। জামিনে বের হওয়ার পর সে আর আদালতে হাজিরা দেয়নি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।
পরে ৬ বছর পর অর্থাৎ গত ১৩ অক্টোবর গোপন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, আসামি নগরীর খুলশী থানাধীন পশ্চিম খুলশী এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি আলালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাস্টমস উপ-কমিশনারের বিরুদ্ধে বিডারদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধরোগী প্রতি বরাদ্দ ১৭৫ টাকায় উন্নীত করে মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি