রাষ্ট্রপতির নির্দেশে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের সুযোগ রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ্যেই গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইনটা খুব ছোট আইন। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দানের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ প্রদানের নিমিত্তে একটা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে, যেটা অন্যান্য আইনে যেভাবে আছে, ঠিক সেইভাবেই। অনুসন্ধান কমিটিও একটা করা হবে এবং সেটাও মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে এবং সেটার দায়িত্ব ও কার্যাবলী… সুইটেবল কেন্ডিডেটের নাম রেকমেন্ড করবে।
যেহেতু এর আগে আইন ছিল না, আগের নির্বাচন কমিশনগুলোও এ আইনের অধীনে করা হয়েছে বলে ধরে সেগুলোর সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি আইনে রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।
কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন গত ৫০ বছরেও হয়নি। গেল এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই নতুন ইসি নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেজন্য গত দুইবারের মতো এবারও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছেন।
প্রায় সব দলই সেখানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছে। কয়েকটি দল নতুন সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করলেও কেউ কেউ বলেছে এ প্রক্রিয়ার দরকার নেই।
সংলাপের শেষ দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বঙ্গভবনে যাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হলো সার্চ কমিটি রেখেই। এ আইনের খসড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স হতে হবে এবং সরকারি-আধাসরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগে কমপক্ষে ২০ বছর কাজ করতে হবে।
অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো আদালতের মাধ্যমে অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পরে দায়মুক্ত না হয়ে থাকলে, বিদ্যমান নিয়মের বাইরে অন্য কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ফৌজদারি আইনে দু্ই বছরের সাজা হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কখনো দণ্ডিত হলে, প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য হওয়া যাবে না।
কেউ একবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করলে আবার ওই পদে যেতে পারবেন না। তবে কেউ আগে নির্বাচন কমিশনার পদে থাকলে পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।
নতুন যে কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সংলাপ শুরু করেছেন, সেই ইসি এ আইনের আওতায় হবে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি এর মধ্যে হয়ে যায়, তাহলে তো হবে। এ আইন সংক্ষিপ্ত হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত বিধি করে দেওয়া হবে জানান সচিব।
অনুসন্ধান কমিটিতে থাকবেন কারা : অনুসন্ধান কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটাও খসড়া আইনে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক এই সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাই কোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, পিএসসির চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনিত দুজন ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ এই কমিটির সদস্য হবেন।












