দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতার কারণ কী

| রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ বাংলাদেশ সফলভাবে সামাল দিয়েছে বলে দাবির পর এবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ ছিল নিম্নমুখী। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় মার্চে।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বেশি তীব্র ছিল। একইসাথে গুরুতর রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যাও প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানেই তা দেখা যাচ্ছে। নিম্নমুখী অবস্থা থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যায়। করোনার জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে বেশি গবেষণা করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর সাহা বলেন, সংক্রমণ যখন নিম্নমুখী হয়েছিল, তখন সবার মাঝে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। সেজন্য সব ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাব থাকার বিষয়টি এবার সংক্রমণের তীব্রতার অন্যতম কারণ। খবর বিবিসি বাংলার।
তিনি বলেন, আমরা বিয়েবাড়ি থেকে শুরু করে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত সব জায়গায় গেছি। সেটার কারণেই ভাইরাস যথেচ্ছভাবে আমাদের মাঝে এসেছে। ভাইরাস যখন শরীরে আসে, তখন সে মাল্টিপ্লাই (সংখ্যা বৃদ্ধি) করে এবং এর মধ্যে মিউটেশনগুলো হয়। একইভাবে বিস্তারও ঘটে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সব জায়গায় ঘুরে বেড়ানো বা জনসমাগম অন্যতম কারণ।
তিনি জানান, গবেষণায় আরও কয়েকটি কারণ তারা পেয়েছেন। আমাদের এখানে ইউকে এবং সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট এসেছে। এগুলোর বিস্তার হয়েছে সব জায়গায়। সবকিছু মিলিয়ে এই অবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, এর বাইরেও আরও কারণ থাকতে পারে। সেগুলো চিহ্নিত করে গভীর গবেষণা করা প্রয়োজন।
আইইডিসিআরের কর্মকর্তারাও তাদের গবেষণায় একই ধরনের কারণ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, গবেষণায় ঘাটতির কারণেও সংক্রমণ তীব্রতার কারণ বুঝতে বিলম্ব হয়েছে। গবেষণা করার মতো প্রতিষ্ঠানের অভাব আছে। মুশকিল হয়েছে, গবেষণাগুলোর ওপরও সাধারণ মানুষ এবং নীতি নির্ধারকরাও অনেক সময় পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন না। যার ফলে এই যে ভেরিয়েন্ট এসেছে এটা কিন্তু আমরা দুই-তিন মাস পর জানতে পারলাম।
এদিকে ভারতে পরিস্থিতি যে খারাপ হচ্ছে, সে ব্যাপারেও বাংলাদেশের নজর রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। ড. সমীর সাহা বলেন, ভারত ও পাকিস্তানসহ এই উপমহাদেশে বড় আকারে একটা ঢেউ এসেছে।
অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যে ট্রিপল মিউটেটেড ভাইরাস এসেছে, সেটা বাংলাদেশে এলে পরিস্থিতি কী হবে সেটা ভাবলে গা শিউরে ওঠে। তিনি মনে করেন, ভারতে সংক্রমণের ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করে এখনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা ভারতে সংক্রমণের গতিবিধির দিকে নজর রাখছে। সরকারের বিশেষজ্ঞ বা কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. শহীদল্লাহ বলেন, যখন আমাদের সংক্রমণ কমা শুরু হলো, তখনও আমরা বলেছি যে আমাদের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিরোধ এবং হাসপাতালের সেবা দুটি বিষয়েই প্রস্তুত থাকার কথা বলেছিলাম। তিনি বলেন, এটাও পরিষ্কার বলেছি, এই মহামারী বিশ্ব থেকে কবে যাবে কেউ বলতে পারছে না। এটা বুঝতে পারলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে যা যা করণীয় তার সবই আমাদের করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতেই সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর দুই সপ্তাহের লকডাউন দেওয়া হয়। এখন এই লকডাউনের মধ্যে আজ রোববার থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়া হচ্ছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, দুই সপ্তাহের লকডাউন ২৮ এপ্রিল শেষ হলে বিধিনিষেধ আরও শিথিল করা হতে পারে। তিনি বলেন, জীবন এবং জীবিকা দুটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ দিনে মারা গেছেন ৯০ জন
পরবর্তী নিবন্ধটিকা নিলেন আরও ১৯ হাজার মানুষ