ঘুরে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ক’দিন আগেও বিপিএলের এবারের আসর থেকে বিদায় হয়ে যাওয়ার শংকায় থাকা এই দল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে টুর্নামেন্টের প্লে অফে। গতকাল শনিবার উইল জ্যাকসের দুর্দান্ত ব্যাটে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স পেরিয়ে যায় প্রাথমিক পর্বের সীমানা। বাঁচা-মরার ম্যাচে দারুণ রান তাড়ায় দলকে জয় উপহার দেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা জ্যাক উইলস। জিতলে প্লে অফ আর হারলে বিদায়ের কিনারায়-এমন সমীকরণে খেলতে নেমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স সামনে পায় বড় লক্ষ্য। সেই চ্যালেঞ্জে উতরে গিয়ে তারা ৪ উইকেটে জয় পায়্য জ্যাকসের দুর্দান্ত ইনিংসে। দুঃস্বপ্নের মৌসুমের শেষ ম্যাচেও সিলেট সানরাইজার্স পরাজয় দেখে। মিরপুর সিলেটের ১৮৫ রান চট্টগ্রাম পেরিয়ে যায় ৫ বল বাকি রেখে। এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি এটিই। ইনিংস শুরু করতে নেমে জ্যাকস দলকে জিতিয়ে ফেরেন ৫৭ বলে ৯১ রানের ইনিংস খেলে। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে সেরা ইনিংসগুলির একটি এটি। ১০ ম্যাচে সমান ৫টি করে জয়-হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম প্লে অফ নিশ্চিত করে তৃতীয় দল হিসেবে। সিলেটের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় আরও আগেই। ১০ ম্যাচে স্রেফ ১ জয় নিয়ে তারা শেষ করল এবারের আসর। শেষটা জয়ে রাঙানোর একটা সম্ভাবনা সিলেট জাগিয়েছিল দারুণ ব্যাটিং করে। তাদের ইনিংসে ফিফটি নেই একটিও। কিন্তু ৫ ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা পায় বড় স্কোর।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে শুরুতে দ্রুত রান এনে দেন কলিন ইনগ্রাম। আগের দুই ম্যাচে ৯০ ও ৮৯ রান করা ব্যাটসম্যান এবার অবশ্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ২ ছক্কায় ১৯ বলে ২৪ করে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান বোল্ড হয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজের বল জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে। তিনে নেমে মিজানুর রহমান আউট হন শূন্যতেই। তবে সিলেটকে ভুগতে হয়নি এনামুল হক ও লেন্ডল সিমন্স ভালো জুটি গড়ায়। এনামুল যথারীতি খানিকটা সাবধানী শুরুর পর রান বাড়ান বড় কিছু শট খেলে। সিমন্স প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরুর পর খেলেন দারুণ কিছু শট। বিশেষ করে শরিফফু ইসলামের বলে পরপর দুটি ছক্কা ছিল চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া। দুজনের ব্যাটিংয়ে ১২ ওভারে ১০০ ছুঁয়ে ফেলে সিলেট। জুটি ভাঙতে চট্টগ্রাম অধিনায়ক আফিফ হোসেন আক্রমণে ফেরান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে। এবারের আসরে দারুণ পারফর্ম করা বাঁহাতি পেসার এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে। ২৭ বলে ৪২ করা সিমন্স ধরা পড়েন সীমানায়। থেমে যায় ৫৪ রানের জুটি। ২৬ বলে ৩২ রান করা এনামুল বোল্ড হন স্টাম্প ছেড়ে খেলতে গিয়ে। জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল ইনিংস আবার গতি পায় মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে। উইকেটে যাওয়ার পরপরই ছক্কা মারেন তিনি মিরাজকে। পরে মিরাজের বলেই টানা দুই বলে মারেন চার-ছক্কা। সিলেটের নেতৃত্ব হারানো মোসাদ্দেকের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন নেতৃত্ব পাওয়া রবি বোপারা। গোটা মৌসুমে নিষ্প্রভ বোপারা জ্বলে ওঠেন শেষ ম্যাচে। দুজনের বিধ্বংসী জুটিতে আসে ৪১ বলে ৮০ রান। চার ছক্কায় ২১ বলে ৪৪ করে বোপারা ফেরেন শেষ ওভারে। মোসাদ্দেক অপরাজিত থেকে যান ২২ বলে ৩৫ করে। শেষ ৪ ওভারে সিলেট তোলে ৬১ রান। রান তাড়ায় চট্টগ্রামকে শুরু থেকেই পথে রাখেন জ্যাকস। ওপেনিংয়ে জাকির হাসান ও তিনে নেমে আফিফ হোসেন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু জ্যাকস দমে না গিয়ে দারুণ সব শটের প্রদর্শনী মেলে ধরেন। আফিফ আউট হওয়ার পরই একেএস স্বাধীনের এক ওভারে তিন চার ও এক ছক্কা মারেন জ্যাকস। পরের পথচলায়ও তার মধ্যে দেখা যায়নি স্নায়ু চাপের লেশমাত্র। তৃতীয় উইকেটে তার সঙ্গে ৪১ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন চাডউইকেট ওয়ালটন। লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে টানা দুটি ছক্কা মারার পর ওয়ালটন (২৩ বলে ৩৫) রান আউট হলে ভাঙে এই জুটি। কৃতিত্ব পুরোপুরি বোপারার। কাভারে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে বল থামিয়ে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন সিলেট অধিনায়ক। এরপর বেনি হাওয়েল বেশিক্ষণ না টিকলেও জ্যাকস চালিয়ে যান ঝড়। শেষ সময়ে তার কাজটা সহজ করে দেন শামীম হোসেন। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৭ বলে ২১ রানের ক্যামিও খেলে সমীকরণ একদম নাগালে আনেন তিনি। এরপর মিরাজ আউট হলেও জ্যাকসকে থামাতে পারেনি সিলেট। তাতে করে আর থামানো যায়নি চট্টগ্রামকেও। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।