জীবন্ত কিংবদন্তীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ২১ মে, ২০২২ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববাসীসহ দেশের আপামর জনগণ সম্যক অবগত আছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সভ্যতার ইতিহাসে নিকৃষ্টকলঙ্কজনক এই দিনে দানবরূপী হিংস্র ঘাতকেরা মুক্তির মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুবঙ্গমাতাসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে বর্বরনৃশংসভাবে হত্যা করে। বিদেশে অবস্থান করার কারণে সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই প্রিয় কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। সেদিন তাঁরা পরিবারপরিজন নিয়ে ছিলেন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকান্ডের খবরটি সর্বপ্রথম তাঁদের গোচরে আনেন পশ্চিম জার্মানির তৎকালীন সম্মানিত রাষ্ট্রদূত হুমায়ন রশীদ চৌধুরী। ব্রাসেলস থেকে জার্মানিতে ফিরে হুমায়ন রশীদ চৌধুরীর অনুরোধে তাঁরা রাষ্ট্রদূতের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। জনাব চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৎকালীন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে যোগাযোগ করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট খুব ভোরে তাঁরা দিল্লিতে পৌঁছে চরম কষ্টের নির্বাসিত জীবনযাপন শুরু করেন।

ভারতে অবস্থানকালে জননেত্রী শেখ হাসিনা বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন রাজনীতি থেকে দূরে। নিজ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হলেও ভারত সরকারের নির্দেশে তিনি দৃশ্যমান কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ নিতে পারেননি। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা নিয়মিত শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণে সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করতেন। বিশেষ করে ১৯৭৯ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় সাহায্য করার লক্ষ্যে নেতারা বারবার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর কারণে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অবশিষ্ট কারোর পক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশ এক প্রকার অসম্ভব ছিল। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জেলজুলুমনির্যাতননিপীড়নের অপরিমেয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন। দেশব্যাপী অরাজকনিষ্ঠুর সামগ্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশকে সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনা করা। জনশ্রুতি মতে এই পরাজিত অপশক্তি দেশকে পুনরায় পাকিস্তানে রূপান্তরিত করার সকল অপকৌশল অতি সূক্ষ্ণ চতুরতায় সম্পন্ন করেছিল।

বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগের প্রায় কর্মীরা হয়েছিল দিগ্‌ভ্রান্ত। মতবিরোধবিশৃঙ্খলায় বিভাজিত ছিল দল। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ১৪১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫ এর পর প্রথম অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে দলে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। মূলত বিরাজিত সকল অসঙ্গতিবিভ্রান্তিঅন্ধকারের শক্তির সকল কদর্য পরিকল্পনাকে নসাৎ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুনরুদ্ধার সংকল্পে অবিনাশী দেশপ্রেমে ঋদ্ধ হয়ে তিনি দেশে ফিরার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ১১ মে বিশ্বখ্যাত পত্রিকা নিউজউইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেই আমি বাংলাদেশে যাচ্ছি। জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর শেষে দেশ ও দলের কঠিন দুঃসময়ে সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন দেশোদ্ধারে অবিচল প্রত্যয়ী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

শত বাধাবিপত্তিবৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সেদিন প্রায় ১৫ লক্ষাধিক জনতা কুর্মিটোলা বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগরে তাঁকে এক নজর দেখা এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে হৃদয় গভীরে জাগ্রত করার প্রবল আকাঙ্খা থেকে জড়ো হয়েছিলেন। অঝোরে বৃষ্টিধারার সাথে তাঁর ও জনগণের ব্যথাতুর কান্নার জল একাকার হয়ে সেদিন বাংলার প্রকৃতি অভূতপূর্ব শোকআনন্দাশ্রিত রূপ পরিগ্রহ করে। লাখ লাখ জনতার দেওয়া সংবর্ধনা সভায় সেইদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শকে ধারণ করেই দেশোদ্ধারের উদ্দেশ্যে। জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতামাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

দেশে ফিরেই দলের সভাপতির অর্পিত দায়িত্বভার গ্রহণ করে গড়ে তোলেন সামরিক সরকারবিরোধী গণআন্দোল। ১৯৮২ জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহণকে অবৈধ ঘোষণা করে এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার আদায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহুবার সামরিকস্বৈরশাসকদের রোষাণলে পড়েছেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দলীয় ৩১ নেতাকর্মীসহ গ্রেফতার হন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলি চালায়। মহান স্রষ্টার অপার কৃপায় তিনি জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হলেও নিহত হয় ১১ জন সাধারণ নেতাকর্মীসমর্থক। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরচারী এরশাদ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। দেশের প্রতিটি আন্দোলনসংগ্রামে তিনি একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টেলিভিশনে কর্মরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিট ফ্রস্টের প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়ার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা জনগণের উপর নির্ভর করবে। আমাদের জনগণ যদি চায়, তবেই হতে পারি। এটা জনগণই ঠিক করতে পারে। তবে আমি জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলতে চাই। আমাদের জনগণ খুই গরীব, তারা সমস্যায় জর্জরিত। এমুহূর্তে তাদের রাজনৈতিক অধিকার নেই তাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে। তাই আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। কারণ আমার পিতার একটা স্বপ্ন ছিল; তিনি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আমার আদর্শ একই রকম এবং আমার বাবাকে অনুসরণ করতে চাই।’ জীবনে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছেবাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমিমাংসিত আন্তর্জাতিক গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি সম্পাদন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতিসহ দেশ ও জনকল্যাণমূলক অনেক কর্মযজ্ঞের সফল ও সার্থক বাস্তবায়ন।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অকুতোভয় সংগ্রামী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করে যে অবিনস্বর কার্যক্রমের জন্য তিনি চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন, তাহলো জাতির জনকের হত্যার বিচারদাবি এবং ঐতিহাসিক এই বিচারিক রায়ের কার্যকর বাস্তবায়ন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন সরকার গঠনের পর ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার এজাহার দায়ের করে ১২ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলকরণ ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। উল্লেখ্য ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে ১লা মার্চ ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারকার্য শুরু, ১৯৯৮ সালে ৮ নভেম্বর মাননীয় বিচারক কাজী গোলাম রসুল কর্তৃক ছিয়াত্তর পৃষ্ঠার রায়ে ঘোষিত ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড, ২০০০ সালে ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলে দ্বিধাবিভক্ত রায় এবং তৃতীয় মাননীয় বিচারপতির আদেশে ১২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বাঙালির বাংলাদেশকে কলংঙ্কমুক্ত করার এক যুগান্তকারী অভিযাত্রা সূচিত হয়। ৩৪ বছর ধরে সমগ্র বাঙালি জাতির হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে সম্মানিত করে এই বর্বর হত্যাকান্ডের বিচারিক কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিসমাপ্তীর সফল উদ্যোগের সকল কৃতিত্ব জাতির আশাআকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক প্রাণপ্রিয় নেত্রী একমাত্র শেখ হাসিনার।

বলিষ্ঠচিত্তে নির্ভীক স্বাধীনস্বত্তায় আত্মপ্রত্যয়ী এ দৃঢ়চেতা নেত্রী তথাকথিত উন্নত শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু ও অপপ্রচারণা এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল অশুভ চক্রান্ত ও প্ররোচণাকে উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিস্থাপন করতে যথার্থ অর্থে সফল ও সার্থক হয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র এবং পদ্মাসেতু নির্মাণকে নিয়ে যে মিথ্যা নাটকের অবতারণা তার স্বরূপ যথার্থভাবে বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল অংকের প্রয়োজনীয় বাজেটের আওতায় পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ এক অভূতপূর্ব সাফল্য ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন পুরষ্কার গ্রহণে শেখ হাসিনা শুধু নিজেই পুষ্পিত হননি; পুরো বাঙালি জাতিরাষ্ট্রকে বিশ্ব পরিমন্ডলে এক ঈর্ষণীয় পর্যায়ে মর্যদাসীন করেছেন। এছাড়াও ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার মামলা জয় এবং ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত স্থায়ী আদালতে ভারতের কাছ থেকে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ পরিমাণ অঞ্চল অর্জনে শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া জীবন্ত কিংবদন্তী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বৎসরের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিক্রমা তথা আশুস্বল্পদীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা কার্যকরণ রোডম্যাপে অগ্রসরমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্রতার হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উন্নয়ন, পোশাক ও ঔষধ শিল্পকে রপ্তানিমুখীকরণ ইত্যাদি আজ দেশের আর্থসামাজিক দৃশ্যপটে যুগান্তকারী অভিধায় সমুজ্জ্বল। অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামো, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীরসমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, পরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয়ব্যবহার যোগ্য পানি ও সুয়ারেজ প্রকল্পের মত বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পের অব্যাহত বাস্তবায়নসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট১ উৎক্ষেপণের সফলতাসক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে উন্নয়নঅগ্রগতির রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত।

জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ গরীব মেহনতি জনতার সুগভীর দরিদ্রতাকে উৎপাটন করে একটি ক্ষুধাদারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন; তারই আলোকে তাঁর সুযোগ্য কন্যা ইতিমধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনায় দেশের সকলকে সাথে নিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য প্রতিনিয়ত রোডম্যাপ বা রূপকল্প প্রণয়ন/কার্যকর করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। ১৭ মে ২০২২ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) ভার্চুয়াল সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমি দেশে ফিরেছিলাম। কারণ এটা আমার বাবার স্বপ্ন ছিল।’ ১৯৮১ সালের এই দিনটির স্মরণে তিনি বলেন, ‘যখন আমি বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমি নিকটাত্মীয়দের কাউকে পাইনি, কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার একমাত্র শক্তি এবং আমি এই শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’ স্বল্প পরিসরে নানামুখী অর্জন অধ্যায় নিবন্ধে উপস্থাপন অনেকটা দুরূহ বটে। ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ বা ঘাপটি মেরে থাকা প্রায় সকল কার্যালয়প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ছলচাতুরীজালিয়াতিপ্রতারণাদুর্বৃত্তায়নে অন্ধকারের শক্তির পদপদায়নপদবী দখলে অশুভ পদচারণার বিষয়ে দেশব্যাপী অতিশয় গুঞ্জন প্রচারপ্রসার পাচ্ছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশাল অর্থসম্পদের মালিক হওয়া এসব কথিত রাজনীতিকঅনুপ্রবেশকারীদুস্কৃতকারীদের নিবিড় যাচাইবাছাইবিশ্লেষণে চিহ্নিত করে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও কঠোর আইনি ব্যবস্থায় তাদের বিচার অনিবার্য হয়ে পড়েছে। নির্দোষ ব্যক্তিকে অযথাপ্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব পোষণে দোষীফাঁসিয়ে দেওয়ার কূটচাল পরিহার করে সত্যিকার অপরাধীদের দল ও সরকার থেকে বিতাড়ন এবং শাস্তি জনগণের আশাআকাঙ্খা হিসেবে প্রতিভাত। একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষেই সকল অনুকম্পাবদান্যতা পরিত্যাজ্যে যথার্থ অর্থেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে দুঃসময়ের ত্যাগীসৎযোগ্য ব্যক্তিদের সঠিক মূল্যায়নে সোনার মানুষ আবিষ্কার এবং দেশ পরিচালনায় তাঁদের স্ব স্ব যোগ্যতায় প্রতিস্থাপন সম্ভবদেশবাসীর এই প্রত্যাশাটুকু মোটেও অমূলকঅযৌক্তিক নয়।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধফরহাদাবাদে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
পরবর্তী নিবন্ধআবদুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন বাঙালির আলোকবর্তিকা