চামড়ার আড়তে লবণের বাড়তি দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা

এবারও মাঠে থাকবে গাউসিয়া কমিটি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৮ জুন, ২০২৩ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির ঈদে চট্টগ্রামে সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চান আড়তদাররা। তবে চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণের বাড়তি দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানান, গত বছর বিভিন্ন আড়তে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এবারের ঈদেও একই পরিমাণ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছেন তারা।

বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির পশু থেকে। সে কারণে এ সময়টাই চামড়া সংগ্রহের মূল মৌসুম।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশে কোরবানির ঈদ হবে। তার পরের দুদিনও চলবে কোরবানি। ওই সময় পাড়ামহল্লা ঘুরে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারির কাছে বিক্রি করবে। ঈদ সামনে রেখে পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৩ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪ টাকা বেড়েছে। খবর বিডিনিউজের।

প্রতিবারের মতো এবারও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের হিসাব করে চামড়া কেনার পরামর্শ দেন আড়তদারদের নেতা মুসলিম। তিনি বলেন, এ বছর গরমের তীব্রতা বেশি। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে লবণ দিয়ে রাখা হয়

লবণের দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তা : চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদারদের দাবি, ১০০টি চামড়া সংরক্ষণের জন্য এক বস্তা লবণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রতি বছর কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগে থেকে বাজারে লবণের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তারা বলছেন, গত বছর প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ বিক্রি হয়েছিল ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায়। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০০ টাকা। সে হিসাবে শুধু প্রতিটি চামড়ার সংরক্ষণে লবণের খরচ হবে ১০ টাকার বেশি। এর সাথে যুক্ত হবে শ্রমিক, গুদাম খরচসহ অন্যান্য বিষয়। সব মিলিয়ে প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে অন্তত ৩০০ টাকার মতো খরচ হয় আড়তদারদের।

আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম বলেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার সময় ২০ শতাংশ কর্তন করে চামড়া কিনে থাকে। আবার সব চামড়া চট্টগ্রামে বিক্রি হয় না। যার কারণে চামড়া ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রেও গাড়ি ভাড়া এবং অতিরিক্ত আড়ত খরচ বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, প্রতি বছর কোরবানির মাস দুয়েক আগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেটার বড় প্রভাব পড়ে আমাদের সংরক্ষণ খরচে। এ বছরও তা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সরকার যদি লবণ আমদানির সুযোগ দিত, তাহলে এভাবে দাম বৃদ্ধি করতে পারত না।

এবারও মাঠে থাকবে গাউসিয়া কমিটি : ন্যায্য দাম না পাওয়ার অজুহাতে ২০১৯ সালে মৌসুমী ক্রেতারা সড়কে ফেলেছিলেন কোরবানির পশুর চামড়া। ফলে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এর পরের বছর মহামারী ও লোকসানের শঙ্কায় একপ্রকার অদৃশ্য হয়ে পড়েছিলেন কোরবানিকেন্দ্রিক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ২০২১ সালে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীর দেখা মিললেও তারা আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই চামড়া কিনেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে গত বছর গাউসিয়া কমিটি চামড়া সংগ্রহ করায় অনেকটা উধাও ছিল ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।

এ বছরও চামড়া সংগ্রহে গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, গত বছর তারা প্রায় এক লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। এ বছর তারা দেড় লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট করেছেন।

আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের অধীনে দেশে পরিচালিত হয় দুই শতাধিক সুন্নিয়া মাদ্রাসা। এ ট্রাস্টের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাউসিয়া কমিটি। মহামারীর মধ্যে কোভিডে মৃতদের সৎকারের মতো কাজে সহায়তা দিয়ে এ সংগঠন আলোচনায় আসে।

আব্দুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রামের এক আড়তদার গতবার লোকবল দিয়ে আমাদেরকে সহায়তা করেছিল এবং উনি এসব চামড়া কিনে নিয়েছিলেন। এবারও উনি এসব চামড়া নিবেন এবং লোকজন দিয়ে সহায়তা করবেন বলে আমাদের সাথে কথা হয়েছে।

ইতোমধ্যে মুরাদপুর সুন্নিয়া মাদ্রাসা মাঠে চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে চামড়া সংগ্রহের জন্য তাদের সংগঠনের ৭০০ ইউনিটের মাধ্যমে অন্তত ৭ হাজার কর্মী কাজ করবেন। তার পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় আরও লোকজন থাকবেন। তবে সংরক্ষণের কাজটি করবেন আড়তদারের নিয়োজিত লোক। চামড়া সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে ১০০টি ও বিভিন্ন উপজেলায় আরও ১০০টিসহ মোট ২০০ গাড়ি থাকবে। সংগ্রহের পর এসব গাড়িতে করে চামড়াগুলো মুরাদপুর সুন্নিয়া মাদ্রাসা মাঠে এনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাজারে পর্যাপ্ত লবণ, সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টিপাত হতে পারে আগামী তিন দিন