চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা সিআরবিতে হাসপাতাল না চাইলে প্রধানমন্ত্রীও মত দেবেন না বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায়। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমে যেহেতু হয়েছে, তাই রেল মন্ত্রণালয়ের ভিন্নমত থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা অথরিটি না। পিপিপির বিষয়ে একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি অথরিটি আছে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে সিআরবিতে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তারপরও এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী হবে। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম পুরাতন রেলস্টেশনে রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের প্রস্তাবিত বহুতল ভবন নির্মাণের একটি স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি বলেছিলেন ‘চট্টগ্রামের মানুষ না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না’। এখন আপনার বক্তব্য কী? চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের দাবি বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল না করে উদ্যান করা হোক-এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যা কিছু হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়েই করতে হবে। এটা তো আমরা চট্টগ্রামের জনগণের জন্যই করছি। এখন চট্টগ্রামের জনগণ চান কি চান না এই বক্তব্য তো আপেক্ষিক। আমি বললাম যে, আমি চিটাগাংয়ের জনগণের কথা বলছি। আমি চিটাগাংয়ের কত পারসেন্ট লোকের রিপ্রেজেন্ট করি, এগুলোও তো প্রশ্ন আসে। চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিনিধি তো এখানকার মন্ত্রী-এমপিরা আছেন। উনারা যদি না চান, তাহলে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী উনাদের বিরুদ্ধে যাবেন না। আমরাও কি বিরুদ্ধে যাব? আমাদের দরকার কি?
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যে নীতি, ৩০ শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে পিপিপির মাধ্যমে। এখানে একটা কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে; প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। সিআরবির প্রকল্পটাও ইনিশিয়েট করে ওখান থেকে মোটামুটিভাবে যখন মাঠ পর্যায়ে গেছে, তখন কিন্তু অভিযোগ পাল্টা অভিযোগগুলো আসছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
নতুন কালুরঘাট সেতুর কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কালুরঘাট সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার কাজ চলছে। বর্তমানে যে সেতু আছে সেটার উচ্চতা ৪ দশমিক ৬ মিটার। নৌযান চলাচলের জন্য এটি ১২ দশমিক ২ মিটার উচ্চতায় নির্মাণ করতে হবে। আগের রেললাইন উপরে তুলে তারপর করতে হবে। আমরা চাই, সেতু করার পর যেন কোনো সমস্যা না হয়। আগেও তো সাইক্লোনের সময় জাহাজ এসে সেতুতে আঘাত করেছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই নকশা তৈরির কাজ চলছে। এ কারণে একটু দেরি হচ্ছে। তবে অবশ্যই সেতু হবে। সেতুতে রেলেরও ডাবল লাইন থাকবে, সড়কেরও ডাবল লাইন থাকবে।
বন্দর এলাকায় রেলের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এলাকায় রেলের জমিতে চট্টগ্রামের একটি শিল্পগ্রুপকে বেসরকারি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জমি লিজ দেওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, সরকার নিজে ব্যবসা করে না, যারা ব্যবসা করছে তাদের সহযোগিতা করছে। সরকারের নীতি তাই। রেলের ভূমি যেটা আমাদের উন্নয়নের কাজে লাগবে না, সেটার যেন যথাযথ ব্যবহার হয়। অনেকে জমি দখল করে বসে আছে। আগে সেদিকে রেলের নজর ছিল না। এখন আছে।
রেল ব্যবস্থাপনা এখন আগের মতো নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু ট্রেন চলবে আর মালপত্র বহন করবে, সেই ধারণা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেনে গেছি। আমরা রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে দেশেও তাদের মতো রেল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। উন্নত দেশে ঘুরে মনে হয়েছে, টোটাল একটি অ্যাকটিভিটিজ। শপিং কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বিনোদনের ব্যবস্থা নিয়ে রেল গড়ে উঠছে। কাজেই একমুখী কার্যক্রম এখন আর নেই। উন্নত দেশে এভাবেই আছে।
মন্ত্রী বলেন, রেলওয়ের অনেক জায়গা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে চাই। এতে একদিকে রেলওয়ের আয় বর্ধিত হবে, অন্যদিকে রেলওয়েতেও নতুনত্ব তৈরি হবে। আমরা যে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি তার সঙ্গে যাতে সামঞ্জস্য হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন কখন দেওয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে বেশিরভাগ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকছে। ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। অর্ধেক আসনে যাত্রী ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে একমাত্র ট্রেন চলাচল করছে। আর কোনো পরিবহন খাত এটি মানছে না। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত ওই রুটে নতুন ট্রেন দেওয়ার।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের একটি প্রস্তাব ছিল, তারা তাদের কল্যাণের জন্য এখানে একটি মার্কেট করতে চায়। কোন জায়গাটা মার্কেটের জন্য দেওয়া হচ্ছে, সেটা মাঠ পর্যায়ে দেখার জন্যই মূলত আমার এখানে আসা। এটা আমরা দেখলাম। দেখার পরে ঢাকায় গিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনের পাশে প্রস্তাবিত স্থান পরির্দশন করে মন্ত্রী চট্টগ্রাম নতুন রেলস্টেশনে যান। স্টেশনের সামনে এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং ও ভাসমান দোকান দেখে ক্ষেপে যান তিনি। এ পরিস্থিতি দেখে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শামস মো. তুষার ও স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করতে সেখানে উপস্থিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী সিআরবির কনফারেন্স কক্ষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি বলেন, আজকে যাদের বহিষ্কার করেছি তারা যেন চেয়ারে না বসেন।
সিআরবিতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে বেলা দেড়টায় তিনি রেলওয়ে রেস্টহাউজে যান। সেখান থেকে সাড়ে ৩টায় বের হয়ে তিনি সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত হাসপাতালের স্থান পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে বন্দর এলাকায় রেলের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) পরির্দশনে যান।
এ সময় মন্ত্রীর সাথে ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম।










