বিপিএল চট্টগ্রাম পর্বের সমাপ্তি ঘটেছে। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এ পর্বের শেষ দুটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল এবারের বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব। গতকাল মঙ্গলবার দিনের প্রথম খেলায় মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ৫০ রানে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। দ্বিতীয় খেলায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ১৪ রানে পরাজিত করে ফরচুন বরিশাল। এ জয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে সাকিবের ফরচুন বরিশাল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে বরিশাল। জবাবে সব উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলতে পারে চট্টগ্রাম। এই নিয়ে ৬ ম্যাচে চতুর্থ জয় পাওয়া বরিশাল ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এলো। ৭ ম্যাচ খেলা চট্টগ্রাম ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই থেকে নেমে গেল চারে। এই ম্যাচে বরিশালের জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। প্রথমে তার ফিফটিতে ভর করেই সম্মানজনক সংগ্রহ পায় বরিশাল। পরে বল হাতে নেন ৩ উইকেট। সেই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শও করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই আফগান স্পিনার মুজিব-উর-রহমানের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন চট্টগ্রামের ওপেনার উইল জ্যাকস। এরপর আফিফ হোসেন ও শামিম হোসেন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করে ৭০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ৩২ বলে ৩৯ রান করা আফিফকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন সাকিব। এরপর ২৬ রান যোগ হতে আরও ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। ১৩ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে যা একটু চেষ্টা করেন মিরাজ। কিন্তু ব্র্যাভোর বলে তার বিদায়ের পর চট্টগ্রাম ফিরে দাঁড়াতে পারেনি। শেষ ওভারে তাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮ রান। কিন্তু নাসুম আহমেদের উইকেট হারিয়ে ওই ওভারে মাত্র ৩ রান তুলতে পারে চট্টগ্রাম।
বল হাতে সাকিব ও মুজিব দুজনেই ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন। মুজিব আবার ৪ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ৯ রান। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রানা ও ব্র্যাভো। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি বরিশাল। তৃতীয় বলেই মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর শিকার হয়ে ১ রান করে সাজ ঘরে ফেরেন ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। আরেক ওপেনার ক্রিস গেইলও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। ১৯ বলে ২৫ রান সংগ্রহ করে উইল জ্যাকসের শিকার হন তিনি। এরপর ২৮ রান করে আফিফ হোসাইনের বলে আকবর আলীকে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। শান্তর বিদায়ের পর তিনে ব্যাট করতে নেমে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাকে সঙ্গ দেন তৌহিদ হৃদয়। ৩৩ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়ে বেনি হাওয়েলকে ক্যাচ তুলে দেন হৃদয়। ২২ রান করে বিদায় নেন তিনি। একপ্রান্ত আগলে রাখা সাকিব ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩ ছয় ও ৩ চারে ৩০ বলে অর্ধশতক তুলে নেন। এরপর আর থিতু হতে পারেননি তিনি। মৃত্যুঞ্জয়ের বলে ছক্কা হাঁকাতে উইকেট হারান বরিশালের অধিনায়ক। সাকিবের বিদায়ের পর বিপর্যয়ে পড়ে বরিশাল। ১৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। চট্টগ্রামের হয়ে ২ ওভারে ১২ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নেন মৃত্যুঞ্জয়। ২টি উইকেট শিকার করেন শরিফুল। একটি করে উইকেট পান জ্যাকস, আফিফ ও হাওয়েল।
দিনের প্রথম খেলায় এবারের বিপিএলে একমাত্র অজেয় থাকা দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দেয় তামিম-মাশরাফিদের মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৫০ রানে হারায় ঢাকা। এই জয়ের ফলে ঢাকার পয়েন্ট দাঁড়াল ছয় ম্যাচে ৬। কুমিল্লা ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ঢাকার ব্যাটিংয়ে ভূমিকা রাখেন তামিম এবং মাহমুদউল্লাহ। আর কুমিল্লার ব্যাটিংয়ে হাল ধরেছিলেন মাহমুদুল হাসান এবং ইমরুল কায়েস। তবে ঢাকার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৮২ রানের টার্গেটটা অনেক বড় টার্গেটে পরিণত হয়েছিল কুমিল্লার ব্যাটারদের জন্য। আর সে টার্গেটে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ফলে টুর্নামেন্টে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয় তাদের। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ঢাকা দুই উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু দুজন মিলে ২৫ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। ৩৫ বলে ২টি চার এবং তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৪৬ রান করে ফিরেন তামিম। দশ ওভারে ঢাকার রান ছিল ৭৮। একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নেন মাহমুদউল্লাহ। তার লড়াকু ৪১ বলে ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংসের উপর ভর করে ঢাকা পৌঁছে যায় ১৮১ রানে। ৩টি চার এবং ৪টি ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষে ২টি উইকেট নিয়েছেন তানভীর ইসলাম। ১৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই লিটন দাশের উইকেট হারায় কুমিল্লা। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ডুপ্লেসিস এ ম্যাচে পারেননি ঝড় তুলতে। ফিরেছেন ৮ রান করে রান আউট হয়ে। তবে তরুণ মাহমুদুল হাসান ছিলেন আস্থায় অবিচল। অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে নিয়ে এগিয়ে যান এই তরুণ। কিন্তু ইনিংসের দশম এবং নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসে কুমিল্লাকে বড় ধাক্কা দেন আন্দ্রে রাসেল। একই ওভারে তুলে নেন ঢাকার দুই সেট ব্যাটার ইমরুল কায়েস এবং মাহমুদুল হাসান জয়কে। প্রথম বলেই ইমরুল কায়েস ফিরেন বোল্ড হয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ২৮ রান। ওভারের শেষ বলে মাহমুদুল হাসানও ফিরেন বোল্ড হয়ে। ৩০ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন এই তরুণ। জোড়া সে ধাক্কা না সামলাতেই ক্যামেরন ডেলফোর্ড ফিরেন রান আউট হয়ে। ফলে অনেকটাই থেমে যায় কুমিল্লার রানের চাকা। ১৩১ রানে থামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ঢাকার পক্ষে আন্দ্রে রাসেল নিয়েছেন তিনটি উইকেট। দুটি করে নিয়েছেন এবাদত হোসেন এবং কাইস আহমেদ। বিপিএল এর চট্টগ্রাম পর্ব শেষে আগামীকাল ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হবে টুর্নামেন্টের ঢাকা পর্ব।