গত ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশের উপর বিষফোঁড়া হয়ে আছে রোহিঙ্গা সমস্যা। তবে ২০০৫ সালের জুলাই মাসের পর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকায় গত ২ দশক ধরে এ সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠছে। এখন ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বইছে সীমান্ত জেলা কক্সবাজার। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণের মাঝেও বাড়ছে ক্ষোভ। কিন্তু কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা, কবে হবে এ সংকটের সমাধান; তা নিয়ে শীঘ্রই কোন আশার আলো দেখছেন না স্থানীয়রা।
তবে মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট দ্রুত সমাধান করা যেতে পারে বলে মনে করছেন কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রোহিঙ্গা সমস্যার প্রথম শুরু হয় ১৯৭৮–৭৯ সালে। সেসময় প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা) সরকারের সাথে দ্বি–পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এ সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হলেও ১৯৮২ সালে সেদেশের সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার পর পুনরায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। তবে এরপর ব্যাপক মাত্রায় রোহিঙ্গা আসে ১৯৯১–৯২ সালে। সেসময় ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরমধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হলেও ২০০৫ সালের ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকায় বাকী ১৩ হাজার ২৭৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আর ফেরত নেয়া হয়নি। আর আটকে পড়া এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে প্রায় অর্ধলাখে উন্নীত হয়েছে। এরা এখন উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছে। এরপর ২০১২ সালের সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এবং ২০১৭ সালের আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ৮ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত ২ বছর ধরে বিদ্রোহী আরকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাত বৃদ্ধির পর আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে উখিয়া–টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে এবং আশপাশে বসবাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। প্রায় ১০ হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস করে তাদের জন্য বানানো হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র।
কিন্তু কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা, কবে হবে এ সংকটের সমাধান; তা নিয়ে শীঘ্রই কোন আশার আলো দেখছেন না স্থানীয়রা। যদিও গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুছ উখিয়ার কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সাথে ইফতার করার সময় তাদের আগামী ঈদ নিজ দেশে উদযাপনের আশা করেন।
তবে এরপর গত ৩ মাসে এ বিষয়ে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা ছাড়া কেবল মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান আশা করা যায় না। তবে আরাকান আর্মির উচিত আরাকানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য এ বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া।











