কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেল কক্ষ থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতার হাত বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় শহরের হলিডে মোড়ে অবস্থিত হোটেল সানমুনের ২য় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত সাইফুদ্দিন (৪৫) শহরের ঘোনারপাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমাণ্ডার আবুল বশরের ছেলে ও কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার মরদেহে ছুরির তিনটি আঘাত ছাড়াও জখমের চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুল ইসলাম। এদিকে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজের রেকর্ডকৃত দৃশ্যে নিহত আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে মুখে মাস্ক ও সাদা পাঞ্জাবি পরা এক যুবককে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে এসপি মাহফুজুল ইসলাম জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার জন্য হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজসহ নানা উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে ৬ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, ওই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং পাশের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সাইফুদ্দিন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে হোটেল সানমুনে যান। এরপর ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে ২০৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন।
কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, সিসিটিভি ফুটেজের দৃশ্যে ওই যুবকের মুখে কালো রংয়ের একটি মাস্ক, হাতে ঘড়ি ও মোবাইল দেখা গেছে। তারা রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কক্ষটিতে প্রবেশ করলেও রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে কক্ষটি থেকে বের হয়ে যায় ওই যুবক। এরপর তাকে হোটেলের দ্বিতীয় তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখা যায়। এরপর হাত মুছতে মুছতে সে আবারও ২০৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে। কয়েক মিনিট পর ওই যুবক আবারও কক্ষ থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায় এবং হোটেলের সামনে থাকা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। ওই যুবককে শনাক্ত করা সম্ভব হলে খুনের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
নিহত সাইফুদ্দিনের বন্ধু বৈরাম মোহাম্মদ ইলিয়াছ ওই যুবককে বিভিন্ন সময় সাইফুদ্দিনের সঙ্গে দেখা গেছে বলে জানিয়ে বলেন, তার নাম নয়ন। সে রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার বাসিন্দা। নিহতের পরিবারের সদস্যরাও একই দাবি করেন।
নিহতের ছোট ভাই মহিউদ্দিন বলেন, ভাই রাতে বাড়িতে যাননি। ফোনও বন্ধ ছিল। ভাবি (নিহতের বউ) ভাইয়ের বন্ধুদের ফোন করে খোঁজ–খবর নেন। ভাইয়ের বন্ধু ইলিয়াছ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করার পর হোটেল সানমুনের কক্ষে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান।
হোটেলটির ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, গত রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাইফুদ্দিনসহ তিন জন এসে ওই কক্ষে উঠেন। সোমবার (গতকাল) সকালে সাইফুদ্দিনের খুঁজে তার বন্ধুরা এসে কক্ষের দরজায় ধাক্কা দিলে তা খুলে যায়। তারা হোটেল কক্ষের খাটে সাইফুদ্দিনের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেন। সাইফুদ্দিন প্রায়ই এ হোটেলে এসে থাকতেন বলে দাবি করেন হোটেলটির ব্যবস্থাপক রেজাউল।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, সাইফুদ্দিনের হাঁটু, পেট এবং পিঠে ছুরির তিনটি আঘাত দেখা গেছে। তার নিজের প্যান্টের বেল্ট দিয়েই হাত দুটি বাঁধা ছিল। হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার পর্যটন শহর এখন অনেক বেশি অনিরাপদ হয়ে ওঠেছে।
এদিকে, সাইফুদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং খুনিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে কক্সবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।












