আলোকে আলোকময় শাহানশাহ্‌

হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)

ড. মুহম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী | বুধবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

শাহানশাহ্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী () এর স্বভাব ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তিনি একজন মহান অলির সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি ছিলেন দৃশ্যমান অপেক্ষা অধিক অদৃশ্য, বাস্তব অপেক্ষা অধিক রহস্যময়। তিনি চুম্বক সদৃশ আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। যখনই কোন প্রতিক্রিয়া প্রত্যর্পনের ইচ্ছা করতেন, তখনি তিনি প্রতিটি মানুষের তৃণলতাতুল্য স্বাতন্ত্র্যকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে তুলতেন। তাঁর গরম বা ঠাণ্ডা সব ধরনের বাণী, বচন ও শিক্ষা মানুষের আদর্শ জীবন গড়ে তোলার জন্য, ঈমান, একিন ও বন্দেগীর জন্য দুর্লভ পুঁজি বিশেষ। তিনি তিন মহান অলিয়ে কামেলের যথাক্রমে, হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহ্‌ সুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্‌ মাইজভাণ্ডারী (.), কুতবুল আকতাব হযরত মাওলানা শাহ্‌্‌ সুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভাণ্ডারী (.) এবং অছিগাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্‌্‌ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (.)]-এর নিকট প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দীক্ষায় ফয়েজ রহমত লাভ ও খোদা তায়ালার তৌহিদ সম্পর্কিত নিগূঢ় রহস্য জ্ঞান অর্জনপূর্বক মহান মর্যাদাসম্পন্ন অলির আসন অলংকৃত। তিনি কঠোর রেয়াজত ও অবিশ্রান্ত প্রেমপূর্ণ সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির চরম উন্নত স্তরে উপনীত হন। তিনি হলেন খোদার নৈকট্য অর্জনকারী, উচ্চতর বেলায়তের অধিকারী এক মহান অলিয়ে কামেল ।

তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে হিংসাবিদ্বেষপূর্ণ সকল প্রকার সামাজিক ও ধর্মীয় বাধাবিঘ্ন পরিহারপূর্বক প্রেমপ্রেরণা ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবলে সকল ধর্মের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌্‌র একত্বে পৌঁছে দিতে সদাসর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তিনি সকল মানুষকে প্রেমরসে সিক্ত হবার জন্য প্রেরণা যুগিয়েছেন তাঁর প্রেমপ্রেরণা বর্ষণের দ্বারা মানব হৃদয়ের নফছাকৃতি আবর্জনাকে তিনি পরিষ্কার ও পবিত্র করেছেন এবং খোদার একত্বে মিশিয়ে দিয়েছেন। জড়প্রাণী ও রূহানী জগত তাঁর চোখের সামনে ক্ষুদ্র সরিষা সদৃশ ছিল। আল্লাহ্‌ তায়ালার গুপ্ত, ব্যক্ত, ইহ ও পরকাল সকল সৃষ্টজগতে তাঁর প্রভাব বিদ্যমান ছিল। তিনি হলেন হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহ্‌ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্‌ মাইজভাণ্ডারী (.) কর্তৃক প্রবর্তিত প্রসিদ্ধ মুক্ত বেলায়ত ও মুক্তির সপ্ত পদ্ধতির অন্যতম মহান ধারক ও বাহক।

শাহানশাহ্‌্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (.) ছিলেন আলোক প্রদান ও প্রভাব বিস্তারের এক মহান খোদাদাদ সূর্য। তাঁর প্রভাব ও আলোকরশ্মিতে বহু আবর্জনা ও অপবিত্র বস্তু পবিত্র হয়ে তাঁর পবিত্র মহান জগতে মিশে গিয়েছে। আয়ু বৃদ্ধি, সুখদুঃখ, আপদবিপদ তথা সর্বক্ষেত্রে, জগতের বিভিন্ন ঘটনাবলীতে তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাব অত্যুজ্জ্বলভাবে প্রতীয়মান ও পরিলক্ষিত হয়েছে।

শাহানশাহ্‌্‌ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (.) নিজেকে চাদরের তলে ঢেকে রাখার শত চেষ্টা করেও লুকিয়ে রাখতে পারেননি। মহান প্রভুর একত্ববাদ ও বেলায়তী শানকে বিকশিত করার জন্য, মানবজাতির মধ্যে প্রেমপ্রীতি ও বিশ্বাস ভক্তি জাগিয়ে তোলার জন্য এবং খোদার পথে লোকদেরকে আহ্বান করার জন্য তাঁর অনেক অলৌকিক ঘটনা ও কেরামত তাঁর প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রকাশিত হয়ে পড়ত। এ সমস্ত কারামত সাধারণতঃ খোদা তায়ালার ইচ্ছাতেই সংঘটিত হোত। তাই তিনি নিজের স্বরূপকে গোপন রাখতে পারেননি। খোদার ইচ্ছাতেই তাঁর পবিত্র আত্মার মহান বুজুর্গী প্রকাশ পেত। খোদার একত্ববাদ ও মুক্ত বেলায়তী রহস্যের বিকাশের জন্য এসবের প্রয়োজন ছিল। তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাবে এ দেশের অলিতেগলিতে, মাঠেঘাটে বিস্ময়কর অলৌকিক ঘটনা ও কারামত বিকশিত হয়েছে এবং বিদ্যমান রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ও কারামত বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। দেশবাসীর মুখে ও অন্তরে এ সকল কারামতের কথা বিঘোষিত হয়ে চলেছে অহর্নিশ।

তিনি মানবজাতির জন্য এমন কতগুলো দুর্লভ অবদান রেখে গেছেন যার সুফল আবহমানকাল পর্যন্ত স্থায়ী ও অবিকৃত থাকবে। খোদার একত্ববাদে বলীয়ান হতে হলে আধ্যাত্মিক প্রেরণা শক্তির সহায়তা একান্তই প্রয়োজন। হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (.) কর্তৃক প্রবর্তিত মুক্তির সপ্তপদ্ধতির অনুশীলন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কিভাবে মানব মনে আধ্যাত্মিক শক্তির প্রেরণা জাগানো যায় তা তিনি নিজের জীবন সাধনার মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন। নির্বিলাস জীবন যাপনের প্রতি তাঁর ছিল কঠোর নির্দেশ। এমনিভাবে তিনি রিপুজনিত স্বভাব ও আচরণের উৎস এবং মানবতাবিরোধী প্রবৃত্তির ধ্বংসকারী, একত্ববাদ ও উন্নত পথের সহায়ক বহু অবদান মানুষের সম্মুখে আয়না সদৃশ্য বিদ্যমান রেখে গেছেন যা অনন্তকাল পর্যন্ত মানুষের জন্য আদর্শ হিসেবে সুপরিচিত ও কার্যকর থাকবে। বলাবাহুল্য, তাঁর আদর্শ ও নীতি যথাযথভাবে অনুসৃত হলে খোদার নৈকট্য ও চিরশান্তি ভোগ করত মানবজাতি আবহমান কাল ধরে খোদার কৃতজ্ঞতা ও যশঃগীতি গাইতে থাকবে। মহান আল্লাহ্‌তালা আমাদেরকে এ মহাসৌভাগ্য লাভের তওফিক আতা করুন। আমিন! বেহুরমতে সাইয়িদিল মুরসালিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাহ