উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আমরণ অনশনের ১৪৭ ঘণ্টা পার হয়েছে। ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত না আসায় অনশনকারীরা তাদের অনশন ভাঙতে পারেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাসার রাজ। তবে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে এলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে শপথ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের ১৩ দিন চলছে, অনশনের চলছে সপ্তম দিন। অনশনের ১৪৭ ঘণ্টা পার হলেও কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ধরনের আশানুরূপ সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই আমরা আমাদের সহপাঠীদের মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে তাদের অনশন ভাঙাতে চেষ্টা করছি। তবে যতদিন উপাচার্য পদত্যাগ করবে না ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো বলে শপথ নিয়েছি। খবর বাংলানিউজের।
বর্তমানে অনশনরত ২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ১৯ জন সিলেটের ৩টি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৯ জন অনশনরত অবস্থায় উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন। গত ১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে পারিবারিক কারণে একজন বাড়িতে চলে যান। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সাবেক ৫ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার : বিডিনিউজ জানায়, উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চলার মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার শাবিপ্রবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে সিলেটের জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, প্রাথমিকভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ যোগান দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব অর্থ যোগান তারা কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এসব অর্থ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে থাকতে পারে বা করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন বিষয়গুলো সামনে তদন্তে আসবে।
গ্রেপ্তার ৫ জন হলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান স্বপন, স্থাপত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেজা নূর মুঈন দীপ ও নাজমুস সাকিব দ্বীপ, এ কে এম মারুফ হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ।
ফিরে গেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা : অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দল ফিরে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের টানা পাঁচদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশরা সোমবার ফিরে যান।
আন্দোলনকারীদের একজন মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম গতকাল দুপুরে বলেন, আমরণ অনশন শুরুর একদিন পর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় ওসমানী মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি দল অনশনকারীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ক্যাম্পাসে আসেন। সোমবার দুপুর থেকে তারা অনশনকারীদেরকে কোনো মেডিকেল সাপোর্ট দিচ্ছেন না; তারা ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ : সোমবার রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কয়েকটি মোবাইল অ্যাকাউন্ট কাজ করছে না। সবগুলো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
খাবার ফিরিয়ে দিয়েছেন অনশনকারীরা : গতকাল দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাসের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল অনশনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নিয়ে আসেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দেন।
আন্দোলন বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে : শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে এসব অভিযোগ জানায় সংগঠনটি।
প্রসঙ্গত, ১৩ জানুয়ারি শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের ছাত্রীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে তাদের ওপর লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।










