জন স্টুয়ার্ট মিল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। যুক্তিবিদ্যা ও মনস্তত্ত্ব নিয়েও তিনি গভীর অধ্যয়ন করেন। মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তার প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি বিশেষ অবদান রেখে গেছেন।
জন স্টুয়ার্ট মিলের জন্ম ১৮০৬ সালের ২০-এ মে ইংল্যান্ডে। বাবা জেমস মিলও ছিলেন দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ। মিলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয় ছিল অর্থশাস্ত্র। তাঁর প্রাথমিক জীবন ও মানস গঠনে বাবা জেমস মিল এবং বিশিষ্ট দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক জেরেমি বেন্থামের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য পরবর্তীসময়ে মিল বেন্থামের ধারণা থেকে কিছুটা সরে আসেন। মিল তাঁর দর্শন চিন্তায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। ব্যক্তিকে তিনি দেখেছেন যাবতীয় জ্ঞান, শুভবোধ ও সংস্কৃতি চেতনার একমাত্র উৎস হিসেবে। তাঁর মতে, ব্যক্তির ওপর রাষ্ট্রের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ স্বাধীন চিন্তা ও সংস্কৃতি বিকাশের পথে অন্তরায়, যা সামাজিক সুখেরও পরিপন্থী। তিনি রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধিষ্ণু আইন প্রণয়ন ক্ষমতার বিরোধিতা করেছেন। সংখ্যালঘু সহ দেশের সকল নাগরিকের কার্যকর অধিকারের পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। নারী-পুরুষের সমানাধিকারের ব্যাপারেও ছিলেন সোচ্চার। তিনিই প্রথম পার্লামেন্টে নারীর ভোটাধিকারের প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
তবে অবাধ স্বাধীনতার যাতে কোনো অপব্যবহার না হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ছিলেন মিল। মিল মনে করতেন, গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা হলেও এর প্রাবল্য কখনো কখনো ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে খর্ব করতে পারে। মিল তাঁর চিন্তার পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহে।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সাবজেকশন অব উইমেন’, ‘প্রিন্সিপ্যাল অব পলিটিক্যাল ইকোনমি’, ‘ইউটিলিটারিয়ালিজম’, ‘অটোবায়োগ্রাফি’ প্রভৃতি। ১৮৭৩ সালের ৮ই মে জন স্টুয়ার্ট মিল প্রয়াত হন।