আদর্শহীনতায় নিমজ্জিত জাতির পরিত্রাণ কোথায়?
আদর্শ না থাকলে যা হয় তাই হচ্ছে। করোনার ভয়ে সাধারণ মানুষ গুটিয়ে থাকলেও ডাকাত চোর নারীলোভী শয়তানেরা লুকিয়ে নাই। তারা তাদের জোশ আর বল নিয়ে সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। পাহােেড় ধর্ষণ হবার ক দিন না যেতেই এম সি কলেজে ঘটলো একই ঘটনা। তাও আবার ছাত্রলীগের নামে। লীগের নাম ব্যবহার করছে না সত্যি ছাত্রলীগের নেতা এর জবাব এ জীবনে মিলবে না। মূল কথা হলো রাজনীতি কিন্তু আছে রাজনীতির নামে দলবাজি। বেপরোয়া আদর্শহীনতা।
আদর্শ থেকে কতদূরে আমরা? তার আগে জানা দরকার কোন আদর্শের কথা বলছি। নয়তো গৎবাঁধা সে সব কথার মতো শোনাবে। যেমন সবাই বাচ্চাদের বলে, মানুষের মতো মানুষ হও। কিন্তু কোন অভিভাবকের ধারণা নাই কোনজন সেই মানুষ? আমি অভিভাবকদের কাছে জানতে চাই তাঁরা যে কথায় কথায় উপদেশ দেন, মানবিক মানুষ হও বা সততা দিয়ে বড় হও, এসব কথার অর্থ কি? নিজেদের জীবনে যা পালন করেন না বাচ্চাদের সেগুলো বলেন কোন কারণে? আর তারা যদি কোনদিন আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করে আমরা কার মতো মানুষ হবো? ধরুন বললো আমি কি আইনস্টাইনের মতো হবো? আপনি তো রাজি হবেন না। কারণ আইনস্টাইন ছিলেন ইহুদি। আপনাকে যদি বলে তাহলে রবীন্দ্রনাথের মতো হয়ে উঠি? তাও মানবেন না। কারণ ঠাকুরতো বিধর্মী। আর স্কুল পালানো। নজরুল? নজরুলও তাই। বঙ্গবন্ধুর জীবনী শুনতে ভালোবাসেন হয়তো কিন্তু নিজের সন্তান ত্যাগ স্বীকার করুক এটা চান? কাজেই এসব বলে খামোখা মনের শান্তি ছাড়া আর কোন লাভ নাই।
বলছিলাম আদর্শের কথা। কোন আদর্শই একক বা চিরকালীন না। কিন্তু কোন কোন ব্যাপার বা ঘটনা থাকে যা একেকটি জাতির জীবনে চিরকালের মহান ঘটনা। সেটা পুরনো হয় বটে ফুরিয়ে যায় না। আর যখন তাকে বিদায় দেয়া হয় কিংবা পুরনো বলে মনে করা হয় তখনই তাদের পরাজয়ের পথ খুলতে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতি আদর্শের ধারক হতে পারে নি। আমরা মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম জাতীয় পার্টির নামে এরশাদের সেনাশাসন গেলেই মুক্তিযুদ্ধের দেশে ফিরবে জাতি। তা তো হলোই না। বীর বাঙালি জোশ আর আনন্দে ভোট দিয়ে গদীতে নিয়ে আসলো খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে। এযেন বাপকে মেরে কাকাকে রাজা বানানো। কাকার দল এসেই বাংলাস্তান বানানোর চেষ্টায় মত্ত হলো। তারপরের ঘটনা সবার জানা। একসময় তাদের বিদায় নিশ্চিত করলো ওয়ান ইলেভেন নামের প্রচ্ছন্ন সেনা শাসন। আওয়ামী লীগ মুখে যাই বলুক তারা ইহজীবনেও বিএনপির এই লোপাট হয়ে যাওয়া কিংবা ঝাড়বংশে আপাতত নির্বংশ হওয়া ঘটাতে পারতো না। এর জন্য তাদের ওই ওয়ান ইলেভেনের কাছেই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
কিন্তু যেভাবেই হোক লন্ডন পালানো যুবারাজের হাত ধরে নেমে এলো তাদের দলের যবনিকা। থাকলো কারা? আওয়ামী লীগ। একক দল। বছরের পর বছর দেশ শাসনের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রীয় উন্নতি আর আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে বটে সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠতায় দেশ এগুচ্ছে। কিন্তু তলে তলে ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদের এক থাবায় সরকারের বুকের পাটা নুয়ে গেলো। দমন অভিযান যেভাবেই হোক শান্ত করা গেলেও মতিঝিলের ঘটনার পর বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি আগের জায়গায় থাকে নি। আমি সে সময়কার আন্দোলনকারী বা আন্দোলনের নামে হটকারীদের কোন দোষ দেব না। তারা জানতো তারা কি চায়? কেন চায়? জানি না আমরা। তাই সমঝোতার আড়ালে আস্তে আস্তে রেলের জমি থেকে টাকা সব যেমন দিতে হলো দিতে হলো আদর্শের বিসর্জন। তাদের চাওয়া মোতাবেক পাঠ্য বইগুলোও বদলে গেলো। রবীন্দ্রনাথের দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে বাদ পড়লো। এমন বাদ পড়ার তালিকা দীর্ঘ। আমরা এও দেখলাম নারী নেতাদের প্রতি বিদ্বেষ আর ধিক্কার জানানোদের মঞ্চে গেলেন নারী নেতা। বড় দলের সব নারী নেতাই তাদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছেন। তাহলে যুক্তি কি এটা বলে না যে এরাই শক্তিশালী। যে সরকারের আমলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদর্শের জয় কামনা করেছিলাম সে আমলে দেখছি সমঝোতার নামে যাবতীয় আদর্শের বারোটা বাজতে। তাই এখন আর আশা তো করিই না বরং আমি বলি যা সত্য তাই মেনে নেয়া হোক।
সংখ্যালঘু নামে পরিচিত গিনিপিগ আর প্রগতিশীল নামে পরিচিত অল্প সংখ্যক মুসলমানের জীবন ও সম্পদ হোক নিরাপদ। কারণ এরাই সবার গলার কাঁটা। তাদের জীবনকে শান্তিতে রাখতে যারা দেশের মূলধারা নিয়ন্ত্রণ করে বা তলে তলে সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের কথা শোনাই উত্তম। আমি এটা কোন কথার কথা মনে করে বলছি না। খালি গলায় গলায় বঙ্গবন্ধুকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি বললেও তাঁর কোন লাভ বা লোকসান কোনটা হবে না। না বললেও না। কারণ ইতিহাস আর সময় জানে তিনিই শ্রেষ্ঠতম। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের বলা বা ঘোষণার কোন দরকার পড়ে না। তাঁকেতাঁর জায়গায় রাখার কাজ ইতিহাসই করেছে এবং করবে। বরং দেশের শান্তি আর কল্যাণের জন্য নানা রূপ ধারণের পরিবর্তে মনে ও মুখে এক থাকাটাই জরুরি। আপনি প্রতিবাদ করতে পারেন আমার মতো বহু মানুষকে আগেও দালাল বলেছেন এবারও বলবেন তাতে কোন লাভ হবে না। আপনাকে মনে রাখতে হবে শোক বেদনায় মূহ্যমান হবার পরও জাতির জনকের জানাজায় মোট ক জন মানুষ অংশ নিতে পেরেছিলেন? হত্যাকাণ্ডে নিহত হবার পর ও জিয়ার জানাজায় কেমন ঢল নেমেছিল। আপনি ভুলে গেলে চলবে না এদেশের জন্য জান দেয়া সংগ্রাম ও কৌশলে যুদ্ধ জয় করা চার নেতার একজনও সঠিক জানাজা পান নি। আর গোলাম আজমের জানাজা বা শফী হুজুরের জানাজায় মানুষের ঢল। করোনাকে ভয় না করেই মানুষ ছুটেছে। আপনি এর কি ব্যাখ্যা দেবেন? কে শুনবে আপনার তত্ত্ব কথা? বাস্তবতা এই এরাই এগিয়ে।
তাই অনুরোধ আপনারাই বরং নিজেদের শোধরান। নিজেদের শুধরে নিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না বা আ সম রব। আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ আসলেই রূপকথা। সে এক অতীতের স্বপ্নগাথা। বাস্তবে তার না আছে চর্চা না কোন ধারাবাহিকতা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বা কাজের জায়গা, যেক বুদ্ধিজীবী কিংবা আমলা অথবা কামলা সবাই এখন বিপরীত স্রোতের যাত্রী। জোর জবরদস্তি করে আর যাই হোক চেতনা ঠিক রাখা কিংবা জাতিকে জাগানো অসম্ভব। যে শেষ ভরসা আমাদের টিমটিম করে জ্বলছে তার নাম শিক্ষা। সেখানকার অন্ধকার দূর করা না গেলে এদেশ নামে যাই থাক কাজে আর বাস্তবে কি রূপ নেবে তা বলার দরকার দেখি না। আসলে আমার কেন জানি মনে হয় সময় তার নিয়মে চলতে চলতে অনেক কিছুই বদলে দেয়। ভারত বদলেছে আফগানিস্তান বদলেছে পাকিস্তান তো বদলেই আছে। এবার কি আমাদের টার্ন? মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কোন রূপ সামনে দাঁড়িয়ে কে জানে?
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট












