আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না : তামিম

পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে না পারার বিষয়টি ঠিক নয় আমাকে সবাই মনে রাখিয়েন, ভুলে যাইয়েন না ১২ মিনিটের এই ভিডিও বার্তা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপ দলে নেই তামিম ইকবাল। সেটা জানা হয়ে গেছে সবার প্রায় একদিন হয়ে গেল। দল চলে গেল ভারতে। এরপর নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তামিম বিশ্বকাপ দল থেকে তার বাদ পড়ার পেছনে অনেক কিছুই তুলে ধরেন। গতকাল বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে ১২ মিনিটের এই ভিডিও বার্তা পোস্ট করা হয়। সেখানে তামিম বলেন, তিনি পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে পারবেন নাবলে যে খবর এসেছে সে বিষয়টি ঠিক নয়।

তামিম দাবি করেন, তাকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিংবা তিনি যদি প্রথম ম্যাচে খেলেন তাহলে তাকে ওপেনিংয়ের পরিবর্তে নিচের দিকে খেলতে বলা হয়।ক্রিকেট বোর্ডের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে সরাসরি টেলিফোন করে এসব কথা বলেছেন। তামিম বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমি কথাটা ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। আমি জিনিসটা পছন্দ করিনি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। তখন আমি বলেছি তাহলে আপনারা একটা কাজ করেন, যদি এমন চিন্তা করেন, তাহলে আমাকে পাঠায়েন না। আমি নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না।’ তবে বিসিবির কোন কর্মকর্তাকে তাকে ফোন করেছিলেন সেটি নিয়ে কিছু বলেননি তামিম।

তামিম বলেন আমি অবসরে গিয়েছিলাম। আর অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর দুই মাস আমি প্রচণ্ড কষ্ট করি নিজেকে ফিট করার জন্য। ফিজিও থেকে শুরু করে যারা আমার এই যাত্রায় সম্পৃক্ত ছিল আমি নিশ্চিত তারা সবাই একমত হবেন যে এমন কোনো সেশন বা ব্যয়াম নেই যেটি তারা আমার কাছে চেয়েছে অথচ আমি করি নাই। এরপর আমি খেলতে নামলাম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩০৩৫ ওভার ফিল্ডিং করলাম। ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি সে ম্যাচে। পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এলো। সে ম্যাচে যেভাবে ব্যাটিং করেছি তাতে অনেক খুশি ছিলাম। আমি মাত্র ৪৪ রান করেছি। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। যদিও সেটি হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সে ম্যাচের পর আমি মানসিক দিক দিয়ে খুশি ছিলাম। গত ৪৫ মাস ধরে আমার সাথে যা হয়েছে সেগুলো মাথায় অতটা ছিল না সেভাবে। খেলতে মুখিয়ে ছিলাম। বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলাম।

তামিম বলেন, স্বাভাবিকভাবেই ইনজুরি থেকে উঠে এসে এতো দিন পর যখন ক্রিকেট খেলবেন তখন ব্যথার অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হলো তখন আমার অবস্থান ফিজিওকে বললাম। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসেন। একটা জিনিস পরিষ্কার করতে চাই, আমি কোনো সময়, কোনো মুহূর্তে কাউকে কোনো সময় বলি নাই আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। দল ঘোষণার দিন প্রধান নির্বাচক নান্নুও পরিষ্কার করেছেন এটা। কাজেই এটা মিথ্যা কথা। ভুল কথা। আমি জানি না এটা মিডিয়ায় কীভাবে ফিট করা হয়েছে বা কে করেছে। আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম, আমার শরীর এখন এমনই থাকবে। ব্যথা থাকবে। দল যখন নির্বাচন করবেন, এটা মাথায় রেখে করবেন।

ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে আমি, ফিজিও ও কোচ মিলে কথা বলেছিলাম। তিনজন সম্মত হয়েছিলাম যে আমার খেলা উচিত। অথচ এরপর মিডিয়ায় বলা হয়েছে, ফিট না থাকলে খেলা উচিত না। অবাক লাগছে কারণ ওই রুমে সবাই সম্মতি দিয়েছিল। আমি আরেকটি বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। পুরোপুরি সৎ থেকে আমার তরফ থেকে নির্বাচকদের বলেছি, আপনারা মাথায় রেখে নির্বাচন করিয়েন। এমনও হতে পারে যে সমস্যা ছাড়া টানা নয় ম্যাচও খেলতে পারি। আর বিশ্বকাপের সূচি এমন ছিল যে, প্রতি ম্যাচের পরই ৩৪ দিনের গ্যাপ আছে। তিনি বলেন, ইনজুরি যে কোনো সুস্থ মানুষেরও হতে পারে। দুটি ম্যাচ খেলার পর ইনজুরড হলো, এরপর দেশে পাঠিয়ে দিলেন। বিকল্প নিতে পারেন। এ কারণে আমি এ জিনিসটা পরিষ্কার করে বলেছিলাম। এরপর যখন হোটেলে যাই তখন আমাকে অ্যাসেস করে যেটা পেয়েছিল সেটা ফিজিওর রিপোর্টে ছিল। আর সে রিপোর্টে যা ছিল তা হচ্ছে ২৬ সেপ্টেম্বরের ম্যাচ আমি খেলতে পারবো। তবে মেডিকেল বিভাগ মনে করে যদি আমি বিশ্রাম নিই তাহলে আমার জন্য অনেক ভালো হবে। কারণ ২৬ তারিখ আমাদের অনুশীলন ছিল। ২৭ তারিখ দল ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার কথা। ২৮ তারিখ আমাদের একটা প্রস্তুতি ম্যাচ। তারপর একদুই তারিখে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আমি যদি এখন বিশ্রাম নিই, আমি যদি দ্বিতীয় প্র্যাকটিস ম্যাচটা খেলি তাহলে পর্যাপ্ত সময় পাবো।

সবমিলিয়ে ১০ সপ্তাহের পুনর্বাসন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচটা খেলার জন্য খুব ভালো অবস্থায় থাকব। এটাই ছিল ফিজিওর রিপোর্টে। আমি এই ব্যাপারে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি। বিতর্ক করতেও রাজি। কোনো জায়গায় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ, দুই ম্যাচ, ইনজুরি, খেলতে পারব না এসব। হ্যাঁ আমার শরীরে ব্যথা ছিল যেটা অস্বীকার করছি না। অথচ মিডিয়াতে বলা হলো ইনজুরি, দুই ম্যাচ, পাঁচ ম্যাচ এই সেই। আমার কাছে মনে হয় না বিশ্বকাপে না যাওয়ার পেছনে এটার বড় অবদান ছিল। কারণ আমিতো ইনজুরড নই। আমার ব্যাথা থাকতে পারে কিন্তু ইনজুরড হইনি এখনো।

তামিম বলেন, আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন। উনি বেশ জড়িত আমাদের ক্রিকেটে। আমাকে হঠাৎ করে ফোন করে বললেন তুমিতো বিশ্বকাপে যাবা তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না। আমি বললাম ভাই এটা এখনো ১২১৩ দিনের কথা। আমিতো এর মধ্যে ভালো অবস্থায় থাকবো। কী কারণে খেলবো না? তখন বললেন আচ্ছা তুমি যদি খেলোও আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি তুমি যদি খেলোও তাহলে নিচে ব্যাট করবা। হঠাৎ করে এসব কথা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব না। কারণ আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। জীবনে কোনো দিন তিনচারে ব্যাটিংই করিনি। এমন যদি হতো আমি তিনে ব্যাটিং করি, চারে ব্যাটিং করি তাহলে যদি ওপর নিচ করা হয় সেটা মানিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু আমার তিনে চারে পাঁচে ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই। আমি কথাগুলো ভালোভাবে নিইনি। উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ কথাগুলো পছন্দ হয়নি। মনে হচ্ছিল আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।

তখন আমি বললাম দেখেন, আপনারা একটা কাজ করেন যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিসের মুখোমুখি করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না। তারপরও ফোনে উনার সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। সেগুলো আমি প্রকাশ করতে চাই না। তারপর আমি বলেছি যদি আমি যা বলেছি সেগুলো না হয় তাহলে আমাকে রাখিয়েন না। আমি এই নোংরামোর মধ্যে থাকতে পারব না। কারণ যে কথাটা আমি বলিনি সে সব মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। তাই আমি বলেছি যদি আপনি সত্যিই আমাকে চান তাহলে আমাকে মানসিকভাবে ভালো ও খুশি রাখবেন।

কারণ আমি খুব খারাপ তিনচার মাস কাটিয়ে এসেছি। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিনচার মাস। হয়তো এই কথাই যদি আমাকে অন্যভাবে বলা হতো তাহলে হয়তো আমি বিষয়টি মেনে নিতাম। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ যদি ফোন করে বলে খেলিয়েন না, বা খেললেও নিচে ব্যাটিং করাবে। আমি মনে করি এটা ন্যায্য না। আর সেটাই আসলে ঘটেছে। যা সত্যি আমি তাই বললাম। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই। আমি এতটুকুই বলব আমি নিজের তরফ থেকে যতটুকু অনুভব করেছি, যেটা ঘটেছে সেটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। তামিমের এই ভিডিও বার্তায় একটা বিষয় পরিষ্কার এক রকম ফাঁদ পেতে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও তামিম শুভকামনা জানিয়েছেন যে ১৫ জন বিশ্বকাপে গিয়েছে তাদেরকে।

তামিম বলেন এর বাইরেও অনেক কিছুই ঘটেছে। আর এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনী বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে। দুটো কাহিনী ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে তিনচার মাসে যদি সাতআটটা কাহিনী হয় তাহলে সেটা ইচ্ছাকৃতই হয়। সব শেষে তামিম বললেন, আমাকে সবাই মনে রাখিয়েন। ভুলে যাইয়েন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপের পর একদিনও অধিনায়ক থাকতে চান না সাকিব
পরবর্তী নিবন্ধঅবসরে পাঠানো হলো চসিকের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে